কুড়িগ্রামের উলিপুরে ভিডব্লিউবি কর্মসূচিতে অসচ্ছল নারীদের জন্য বরাদ্দ ১৭ মেট্রিক টন চাল পচা ও দুর্গন্ধযুক্ত অবস্থায় সরবরাহ করা হয়েছে। কার গাফিলতিতে ঘটছে এ কেলেঙ্কারি? পড়ুন বিশ্লেষণ।
বাংলাদেশে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিগুলো মূলত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনের ভার লাঘব করার জন্য নেওয়া হয়। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ভিডব্লিউবি (ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট) কর্মসূচি তারই একটি অংশ। এই কর্মসূচির অধীনে দেশের হাজার হাজার অসচ্ছল নারীকে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়, যা তাদের ন্যূনতম খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে বরাদ্দ।
কিন্তু বাস্তবতা প্রমাণ করছে, মাঠপর্যায়ে এই কর্মসূচি অনেক সময় হয়ে উঠছে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার শিকার।
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বজরা ইউনিয়নে যা ঘটেছে, তা কেবল দুর্নীতি নয়—মানবিক সংকটের এক নগ্ন উদাহরণ।
তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জুলাই ও আগস্ট মাসে বজরা ইউনিয়নের ২৯০ জন সুবিধাভোগীর জন্য বরাদ্দকৃত ১৭ মেট্রিক টন ৪০০ কেজি চাল স্থানীয় গুদাম থেকে উত্তোলন করা হয়।
কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যরা চাল হাতে পেতেই দেখতে পান, অধিকাংশ বস্তায় চাল পচা, দুর্গন্ধযুক্ত, ছত্রাক ধরা ও পাথর মেশানো।
শুধু তাই নয়, প্রতিটি বস্তায় চালের মান আলাদা—যা ইঙ্গিত দেয় পরিকল্পিতভাবে নিম্নমানের ও অখাদ্য চাল সরবরাহ করা হয়েছে।
ফলে অসচ্ছল নারীরা দুই মাসের বরাদ্দ চাল হাতে না পেয়ে গুদামে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে শত শত বস্তা।
প্রশ্ন উঠছে—
এই ঘটনার দায়ভার কার ওপর বর্তাবে? স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করলেও এখনও সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও খাদ্য নিয়ন্ত্রক তদন্তের আশ্বাস দিলেও ভুক্তভোগীরা কার্যকর পদক্ষেপের অপেক্ষায়।
কিন্তু এভাবে বারবার “তদন্ত” এর আড়ালে প্রকৃত দুর্নীতিবাজরা কি পার পেয়ে যাবে?
এই চালের মান গুদাম থেকেই যদি নিম্নমানের হয়, তবে দায় খাদ্যগুদাম কর্মকর্তাদের।
আবার পরিবহন বা বিতরণের পর্যায়ে যদি ভেজাল মেশানো হয়ে থাকে, তবে দায় পড়বে ইউনিয়ন পর্যায়ের দায়িত্বশীলদের ওপর।
বাংলাদেশে দুর্নীতির খবর নতুন কিছু নয়, কিন্তু যখন অসচ্ছল নারীদের ন্যূনতম খাদ্য সহায়তা পর্যন্ত নিম্নমানের চাল দিয়ে ভরাট করা হয়, তখন এটি কেবল প্রশাসনিক নয়, নৈতিক ব্যর্থতাও বটে।
সমাজের সবচেয়ে দুর্বল অংশ যখন রাষ্ট্রীয় সহায়তার নামে অপমানিত হয়, তখন এটি রাষ্ট্রের সুনামের জন্যও এক বড় আঘাত।
দ্রুত তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
ভবিষ্যতে ভিডব্লিউবি ও অন্যান্য সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে তৃতীয় পক্ষ মনিটরিং নিশ্চিত করতে হবে।
সুবিধাভোগীদের সরাসরি অভিযোগ জানানোর হেল্পলাইন চালু করা উচিত।
চাল বা খাদ্যসামগ্রীর মান পরীক্ষা করার জন্য গুদামে স্বচ্ছ প্রক্রিয়া বাধ্যতামূলক করতে হবে।
কুড়িগ্রামের এই ঘটনা এক দিনের বিচ্ছিন্ন সমস্যা নয়; বরং এটি প্রশাসনিক দুর্বলতা, গাফিলতি ও দুর্নীতির ধারাবাহিক উদাহরণ।
যদি এখনই দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
অসচ্ছল নারীদের জন্য বরাদ্দ খাদ্য সহায়তা যেন কোনো দুর্নীতিবাজের লোভের বলি না হয়—এটাই এখন সময়ের দাবি।
