তেজগাঁওয়ের ৭০% সড়ক অবৈধভাবে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও বাসচালকদের দখলে। এতে যানজট, ফুটপাত দখল ও জনভোগান্তি ভয়াবহ আকার নিয়েছে।
ঢাকার তেজগাঁও শুধু একটি শিল্পাঞ্চল নয়, বরং রাজধানীর কেন্দ্রীয় সড়ক-নেটওয়ার্কের হৃদপিণ্ড। কিন্তু আজ তেজগাঁওয়ের সড়কব্যবস্থা কার্যত জিম্মি হয়ে পড়েছে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও বাসচালকদের কাছে। সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে, এলাকার প্রায় ৭০ শতাংশ সড়ক দখলে রয়েছে এসব ভারী যানবাহনের। এতে সাধারণ মানুষের যাতায়াত যেমন সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছে, তেমনি নগর ব্যবস্থাপনাও মুখ থুবড়ে পড়ছে।
২০১৫ সালের ২৯ নভেম্বরের ঘটনা আজও অনেকের মনে আছে, যখন প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড দখলমুক্ত করতে গিয়ে শ্রমিকদের অবরোধে পড়েছিলেন।
পরে সেনা ও পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
কিন্তু কিছুদিনের শৃঙ্খলার পর আবারও দখল ফিরে আসে।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর পরিস্থিতি আরো নাজুক হয়।
সাতরাস্তা থেকে বিজয় সরণি, কারওয়ান বাজার থেকে তেজগাঁও রেলস্টেশন—সব জায়গায় রাস্তার দুপাশ দখল হয়ে গেছে।
ফলে ছয় লেনের রাস্তার কার্যকর ব্যবহার সীমিত হয়ে চারটি লেন প্রায় বন্ধ হয়ে থাকে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বহুতল ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হলেও মামলা, রাজনৈতিক চাপ ও প্রশাসনিক অদক্ষতায় তা এগোয়নি।
সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম ঘোষণা দিলেও বাস্তবায়ন হয়নি।
এখন তিনি কারাগারে। ফলে অস্থায়ী সমাধানের সুযোগও হারিয়েছে নগরবাসী।
চালকরা প্রকাশ্যে বলছেন, প্রতিদিন পার্কিং বাবদ ২০–৪০ টাকা দিতে হয় ইউনিয়ন বা স্থানীয় ‘ভাইদের’।
এই অর্থ যায় রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী মহলের কাছে।
অর্থাৎ, অবৈধ দখল শুধু বিশৃঙ্খলা নয়, বরং একটি সমান্তরাল অর্থনীতিও গড়ে তুলেছে, যেখানে জনগণের ভোগান্তিই আসল মূলধন।
নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, ঢাকার মতো মেগাসিটিতে যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী—দুই ধরনের পরিবহনের জন্যই আলাদা টার্মিনাল অপরিহার্য।
বাস টার্মিনাল যেমন শহরের বাইরে রাখা হয়েছে, তেমনি পণ্যবাহী ট্রাক-কাভার্ডভ্যানের জন্য শহরের প্রান্তে স্থায়ী টার্মিনাল গড়ে তুলতে হবে।
নইলে তেজগাঁওয়ের মতো কেন্দ্রীয় এলাকায় ট্রাকস্ট্যান্ড রাখা কখনোই দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নয়।
তেজগাঁওয়ের সড়ক অবৈধ দখল শুধু যানজট বা জনভোগান্তি নয়, বরং একটি গভীরতর শহরব্যবস্থাপনার ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি।
দায়িত্বশীল সংস্থাগুলো যদি দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ না নেয়, তাহলে তেজগাঁও ধীরে ধীরে ঢাকার গতিশীলতাকে পুরোপুরি পঙ্গু করে ফেলবে।
এখন সময়—কঠোর রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও টেকসই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের।
