ঢাকার ধামরাইয়ে পূজার ডিউটি শেষে বাড়ি ফেরার পথে ভিডিপি সদস্য শাকিল হোসেন খুন হয়েছেন। জমি বিরোধকে কেন্দ্র করে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। ঘটনাটি স্থানীয় নিরাপত্তা ও সামাজিক অস্থিরতার প্রতিফলন।
ঢাকার ধামরাইয়ে পূজামণ্ডপে দায়িত্ব পালন শেষে বাড়ি ফেরার পথে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছেন শাকিল হোসেন (২৫) নামে এক আনসার ভিডিপি (গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী) সদস্য। শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টার দিকে বাইশাকান্দা ইউনিয়নের সিংশ্রী বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত শাকিল হোসেন যাদবপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা হলেও দীর্ঘদিন ধরে তার নানা মোহাম্মদ আলীর বাড়িতে বসবাস করতেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে,
দুর্গাপূজার নিরাপত্তা ডিউটি শেষে বাড়ি ফেরার সময় দুর্বৃত্তরা লোহার রড দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে তাকে হত্যা করে।
ধামরাই থানার ওসি মো. মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
ইতিমধ্যে নিহতের পরিবার থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছে এবং আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এখানে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো—শাকিল হত্যাকাণ্ডের দিনটি ছিল তার ডিউটির শেষ দিন।
দুর্গাপূজার মতো সংবেদনশীল সময়ে তিনি দায়িত্ব শেষ করে ফিরছিলেন।
এ ধরনের ঘটনা শুধু ব্যক্তিগত শত্রুতা নয়, বরং গ্রামীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতাকেও সামনে নিয়ে আসে।
নিহতের পারিবারিক অবস্থা ছিল জটিল।
শাকিলের বাবা অন্যত্র বিয়ে করার পর মা-কে ডিভোর্স দেন।
ফলে শাকিল ও তার ছোট ভাই মায়ের সঙ্গে নানার বাড়িতে বেড়ে ওঠেন।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য জালাল উদ্দিন জানান, শাকিল ছিলেন পরিশ্রমী ও দায়িত্বশীল যুবক।
তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
ধামরাইসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবকরা বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেন।
ভিডিপি সদস্যরা সেই দায়িত্বের অন্যতম অংশীদার।
কিন্তু শাকিলের হত্যাকাণ্ড প্রশ্ন তুলছে—
গ্রামীণ এলাকায় জমি বিরোধ কতটা ভয়াবহ আকার নিচ্ছে?
ব্যক্তিগত শত্রুতা কি আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করছে?
পূজার মতো গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসবের নিরাপত্তা ঘিরে দায়িত্ব পালনকারী স্বেচ্ছাসেবকরা কতটা সুরক্ষিত?
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, গ্রামবাংলার সামাজিক কাঠামোতে জমি বিরোধ দীর্ঘদিন ধরে সহিংসতার প্রধান উৎস।
এর সঙ্গে আইনশৃঙ্খলার শৈথিল্য মিলে পরিস্থিতি আরও জটিল করছে। শাকিল হত্যাকাণ্ড এরই প্রতিফলন।
শাকিল হোসেন হত্যাকাণ্ড কেবল একটি ব্যক্তিগত শত্রুতার ঘটনা নয়, বরং আমাদের গ্রামীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থার নাজুক চিত্র তুলে ধরেছে।
পূজার মতো সামাজিক ও ধর্মীয় আয়োজনের দায়িত্ব পালনের পর এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড আমাদের মনে করিয়ে দেয়—আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও গ্রামীণ বিরোধ সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
ধামরাইয়ে ভিডিপি সদস্য খুনের এই ঘটনা স্থানীয় সমাজে ভয়ের আবহ তৈরি করেছে।
এখন প্রশ্ন একটাই—এই হত্যাকাণ্ডের বিচার কত দ্রুত ও কতটা স্বচ্ছভাবে হবে?
