গোলাম মাওলা রনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে শিগগিরই এশিয়া সাবকন্টিনেন্টে বড় রাজনৈতিক দুর্ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশও এতে জড়িয়ে পড়বে। তার বিশ্লেষণে উঠে এসেছে অর্থনৈতিক সংকট, আমেরিকার ভূমিকা ও প্যান-ইসলামিক ডাইনেস্টির স্বপ্ন।
বাংলাদেশের সাবেক সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক গোলাম মাওলা রনি আবারও এক বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। তার মতে, খুব দ্রুতই এশিয়ার সাবকন্টিনেন্টে বড় ধরনের ভূ-রাজনৈতিক “দুর্ঘটনা” ঘটতে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশও সেই অস্থিরতায় জড়িয়ে পড়বে। সম্প্রতি নিজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত ভিডিও বার্তায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
রনির বক্তব্য শুধু ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা নয়, বরং বর্তমান বাস্তবতার প্রতিফলনও বটে।
অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা, আন্তর্জাতিক শক্তির ভূরাজনৈতিক খেলা এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর মধ্যে নতুন ব্লকের সম্ভাবনা—এসব বিষয়কে তিনি তার বিশ্লেষণে সামনে এনেছেন।
রনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদদে এশিয়া সাবকন্টিনেন্টে বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরি করা হচ্ছে।
পাকিস্তানকে দেউলিয়া করে ফেলার মতো পরিস্থিতি এখন বাংলাদেশেও তৈরি হচ্ছে।
তার ভাষায়, “জনগণ পেটের ধান্দায় অন্য কিছু চিন্তা করতে পারবে না”— এটিই মূল কৌশল।
এ বিশ্লেষণকে কিছুটা অতিরঞ্জিত মনে হলেও বাস্তবতা হলো, পাকিস্তান আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (IMF) ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, আর বাংলাদেশও সাম্প্রতিক ঋণ ও বৈদেশিক মুদ্রার সংকটে প্রায় একই রকম চাপে রয়েছে।
গোলাম মাওলা রনি ভিডিওতে দাবি করেন,
যদি বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়াকে একত্রে কল্পনা করা হয়, তবে প্রায় ১০০ কোটি মুসলমানের একটি ব্লক তৈরি হতে পারে।
এই ধারণা অনেকটা কল্পনাপ্রসূত হলেও এটি মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-কেন্দ্রিক ভূ-রাজনৈতিক মেরুকরণের সঙ্গে মিলে যায়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ঐক্যের আহ্বান নতুন করে জোরালো হচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে।
রনির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য ছিল বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বৈষম্য নিয়ে।
তার তথ্য অনুযায়ী,
গত এক বছরে দেশে নতুন ৬,০০০ কোটিপতি যুক্ত হয়েছে, অথচ একই সময়ে প্রায় ২৫ লাখ মানুষ বেকার হয়েছে।
তাছাড়া ১২টি ব্যাংক দেউলিয়ার পথে।
প্রশ্ন হলো—যেখানে নতুন কোনো বিনিয়োগ নেই, সেখানে নতুন কোটিপতি তৈরি হচ্ছে কীভাবে?
এই প্রশ্ন নিছক রাজনৈতিক নয়, বরং অর্থনীতির অস্বচ্ছতা ও অসম বণ্টন ব্যবস্থার একটি বাস্তব প্রতিচ্ছবি।
রনির মতে, বাংলাদেশের একটি অংশ আবারও “পূর্ব পাকিস্তান” হওয়ার স্বপ্ন দেখছে।
ভারতের সঙ্গে বৈরিতা তৈরি করে পাকিস্তানের সঙ্গে সখ্যতা গড়ার প্রবণতা নীরবে বাড়ছে।
যদিও এ ধরনের মন্তব্য বিতর্কিত, তবুও সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং পাকিস্তানমুখী বক্তব্য এ আলোচনাকে প্রাসঙ্গিক করে তোলে।
গোলাম মাওলা রনির বক্তব্যকে নিছক রাজনৈতিক কৌশল বা ব্যক্তিগত প্রচারণা হিসেবে এড়িয়ে যাওয়া যায় না।
বরং তার মন্তব্যগুলো এশিয়া সাবকন্টিনেন্টের ভবিষ্যৎ ভূরাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সম্ভাব্য চিত্র তুলে ধরে।
বিশেষ করে বাংলাদেশকে ঘিরে অর্থনৈতিক সংকট, বৈদেশিক ঋণের চাপ, এবং আন্তর্জাতিক শক্তির নীরব দখলদারিত্বের বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা জরুরি।
বাংলাদেশ যদি সময়মতো সঠিক নীতি নির্ধারণ করতে ব্যর্থ হয়, তবে সত্যিই এই “দুর্ঘটনা” আমাদের কপালেই লেখা থাকতে পারে।
