চাঁদাবাজির অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেতা সাইফুল ইসলাম রাব্বিসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঘটনাটি ছাত্র আন্দোলনের ভাবমূর্তি ও ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলন বরাবরই রাজনীতি, সমাজ ও রাষ্ট্রের পরিবর্তনের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আন্দোলনের ভেতর থেকে উঠে আসা কিছু নেতার বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ওঠায় ছাত্র আন্দোলনের আদর্শিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এর সর্বশেষ উদাহরণ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মোহাম্মদপুর থানার সাবেক আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম রাব্বিসহ পাঁচজনকে চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেফতার।
রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাতে বসিলা গার্ডেন সিটি এলাকা থেকে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ অভিযানে রাব্বিসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়।
তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা রাজধানীর সেইফ হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকের কাছে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে টাকা আদায় করেছেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি,
গত ২০ সেপ্টেম্বর এক নারী মৃত সন্তান প্রসব করলে বিষয়টিকে কেন্দ্র করে শিশুটির বাবা শাহীনকে সাথে নিয়ে রাব্বি ও তার সহযোগীরা হাসপাতালের মালিকের কাছে গিয়ে প্রথমে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন।
পরে আবারো টাকা দাবি করতেই ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে তাদের ডেকে আনা হয়।
অভিযোগের ভিত্তিতে সেনাবাহিনী তাদের আটক করে মোহাম্মদপুর থানায় সোপর্দ করে।
ভুক্তভোগী হাসপাতাল মালিক সেনা কর্মকর্তাদের কাছে একটি অডিও রেকর্ডিং সরবরাহ করেন, যেখানে অভিযুক্তদের চাঁদা দাবির প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানা যায়।
যদিও অভিযুক্তরা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন, তবে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেয়।
এই ঘটনা নিছক চাঁদাবাজির মামলা নয়—এটি ছাত্র আন্দোলনের ভবিষ্যৎ ভাবমূর্তির সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত।
কারণ, যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মূলত বৈষম্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার দাবিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তার ভেতর থেকেই এমন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়া আন্দোলনের নৈতিক ভিত্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ছাত্র সংগঠনগুলো প্রায়শই মূল দলের ছায়ায় থেকে ক্ষমতার প্রয়োজনে ব্যবহার হয়।
ফলে তাদের অনেকেই সমাজ পরিবর্তনের বদলে ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির দিকে ঝুঁকছেন।
রাব্বির বিরুদ্ধে আগেও চাঁদাবাজির মামলা থাকায় প্রশ্ন উঠছে—এটি কি ব্যক্তিগত অপরাধ, নাকি আন্দোলনের অভ্যন্তরে পৃষ্ঠপোষকতার ফল?
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্রুত পদক্ষেপকে ইতিবাচক হিসেবে দেখা হলেও, একইসাথে এটাও পরিষ্কার হয়েছে যে প্রভাবশালী ছাত্রনেতারা অপরাধে জড়ালে সাধারণ মানুষ ভুক্তভোগী হয়েও মুখ খোলার সাহস পান না।
হাসপাতালে ঘটে যাওয়া এ ধরনের ঘটনাই দেখায়, বিচারহীনতার সংস্কৃতি না ভাঙলে ছাত্র আন্দোলনের অপব্যবহার চলতেই থাকবে।
রাব্বিসহ পাঁচজনের গ্রেফতার কেবল একটি মামলার ঘটনা নয়, বরং ছাত্র আন্দোলনের ভবিষ্যৎ চরিত্র নিয়ে এক বড় সতর্ক সংকেত।
এ ঘটনা প্রমাণ করে, আদর্শিক আন্দোলন ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সীমারেখা অস্বচ্ছ হয়ে উঠছে।
এখন প্রশ্ন হলো—এই গ্রেফতার ছাত্র রাজনীতিকে পুনর্গঠন করবে, নাকি পুরোনো ধারা বজায় রাখবে?
