খুলনায় জানালা খুলে ঘুমন্ত যুবক তানভির হাসান শুভকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। রহস্যজনক এই হত্যাকাণ্ডে স্থানীয় জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
খুলনা নগরীর দৌলতপুরে এক হৃদয়বিদারক ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার গভীর রাতে নিজ বাড়ির কক্ষে ঘুমন্ত অবস্থায় জানালা খুলে দুর্বৃত্তরা গুলি চালায় তানভির হাসান শুভ নামের এক যুবকের ওপর। পরদিন ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
নিহত শুভ (২৮) স্থানীয় আবুল বাশারের ছেলে।
দীর্ঘদিন ধরে একটি বেসরকারি কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার পদে কর্মরত ছিলেন।
সম্প্রতি তিনি বিদেশ যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন।
কিন্তু অদ্ভুতভাবে হঠাৎ করেই তার জীবন থেমে গেল গুলির আঘাতে।
প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, রাত আনুমানিক সাড়ে ৩টার দিকে শুভ গেমস খেলতে খেলতে ঘুমিয়ে পড়েন।
দুর্বৃত্তরা জানালা খুলে খুব কাছে থেকে একাধিক গুলি চালায়।
তার মাথায় দুটি ও হাতে একটি গুলি লাগে।
পরিবারের সদস্যরা প্রথমে শব্দ শুনে দৌড়ে এলে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় পান।
দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলেও ভোরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।
এখানে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছে—
শুভ কি কোনো ব্যক্তিগত শত্রুতার শিকার, নাকি ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব এর সঙ্গে জড়িত?
জানালা দিয়ে সঠিক কক্ষে গুলি চালানোয় ধারণা করা হচ্ছে হত্যাকারীরা বাড়ি ও তার রুটিন সম্পর্কে পূর্বপরিচিত।
রাতের আঁধারে ঘরে ঢোকা ছাড়াই গুলি চালিয়ে পালানো ঘটনাটি অনেকটা “টার্গেট কিলিং”-এর মতো।
এ ধরনের ঘটনা খুলনায় আগে বড় পরিসরে দেখা না গেলেও সাম্প্রতিক সময়ে চাঁদাবাজি, মাদক চক্র ও প্রভাবশালী গোষ্ঠীগুলোর সংঘাত বেড়েছে।
ফলে মানুষের মধ্যে নতুন করে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে।
অনেকে বলছেন, “বাড়ির ভেতরেও যদি নিরাপদ না থাকা যায়, তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে?”
দৌলতপুর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, রাত সাড়ে ৩টার দিকে জানালা খুলে গুলি করা হয়।
ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে এবং হত্যার কারণ উদ্ঘাটনে তদন্ত চলছে।
এখনো কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।
খুনের এই ধরন বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান টার্গেট কিলিং প্রবণতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
বিশেষ করে পেশাদার খুনি ভাড়া করা হলে তারা সাধারণত ভিকটিমকে খুব কাছ থেকে নিশানা করে গুলি করে।
শুভর বিদেশ যাওয়ার পরিকল্পনা, তার চাকরির পদমর্যাদা, কিংবা ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব—সবই তদন্তে গুরুত্ব পেতে পারে।
এ ঘটনা শুধু একটি পরিবারের শোকগাথাই নয়; বরং খুলনা শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতার নগ্ন চিত্র।
রাতের আঁধারে নিজের বাড়িতে জানালা দিয়ে গুলি করে হত্যা—এ যেন নাগরিক জীবনে এক নতুন ভয়ের নাম।
