সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নাহিয়ান আহমেদ বিপ্লবকে ঢাকার মোহাম্মদপুরে বাসা থেকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনা আইনের শাসন, গুম আতঙ্ক ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার প্রশ্নকে আবারও সামনে এনেছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক নাহিয়ান আহমেদ বিপ্লব। শনিবার (৪ অক্টোবর) ভোরে ঢাকার মোহাম্মদপুরে তার নিজ বাসা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তার স্ত্রী।
এই ঘটনাটি কেবল একটি ব্যক্তিগত ভুক্তভোগীর কাহিনি নয়—বরং এটি সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জবাবদিহিতা, আইনের শাসন ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির সংকটকে সামনে নিয়ে আসে।
নাহিয়ান বিপ্লবের স্ত্রী তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি আবেগঘন পোস্টে লিখেছেন,
“আজ সকাল ৬ ঘটিকায় আমার স্বামীকে ডিবি এসে মোহাম্মদপুর নিজ বাসা থেকে ধরে নিয়ে গেছে।
সবাই ওর জন্য দোয়া করবেন।
ওর বাবা অসুস্থ ছিল দেখতে এসে ধরে নিয়ে গেছে।”
এই পোস্টটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনেকেই মন্তব্য করছেন,
যদি সত্যিই ডিবি তাকে নিয়ে যায়, তবে আনুষ্ঠানিকভাবে তা স্বীকার করা উচিত।
অন্যদিকে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন—এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফল নাকি কোনো গোপন তদন্তের অংশ।
নাহিয়ান আহমেদ বিপ্লব ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক এবং ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন।
ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসার পরও তিনি আওয়ামী লীগপন্থী পরিচয়ে পরিচিত ছিলেন।
প্রশ্ন উঠছে—তাহলে হঠাৎ তাকে কেন এভাবে তুলে নেওয়া হলো?
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ছাত্র রাজনীতি প্রায়শই ক্ষমতার লড়াইয়ের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
ফলে প্রাক্তন ছাত্রনেতাদের বিরুদ্ধে নানা সময়ে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চাপ সৃষ্টি হওয়ার নজির রয়েছে।
বিপ্লবের ঘটনা সেই একই ধারাবাহিকতার অংশ হতে পারে বলে অনেক পর্যবেক্ষক মনে করছেন।
গত এক দশকে বাংলাদেশে “গুম” ও “অপহরণ” শব্দ দুটি একটি ভয়ঙ্কর বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো একাধিকবার এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
সরকারের পক্ষ থেকে এ অভিযোগ অস্বীকার করা হলেও মাঠপর্যায়ে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর অভিজ্ঞতা ভিন্ন চিত্রই তুলে ধরে।
বিপ্লবের স্ত্রী যেভাবে অভিযোগ তুলেছেন, তা অনেকটা সেই ‘গুমের’ প্যাটার্নকেই স্মরণ করিয়ে দেয়—ডিবি পরিচয়ে বাসা থেকে তুলে নেওয়া, কোনো লিখিত কাগজ না দেওয়া, পরবর্তী সময়ে আটক অস্বীকার করা ইত্যাদি।
যদি সত্যিই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিপ্লবকে তুলে নিয়ে থাকে, তবে আইনের শাসনের স্বার্থে এটি স্বীকার করে যথাযথ প্রক্রিয়ায় আদালতের মাধ্যমে তদন্ত করা জরুরি।
নাহলে এ ধরণের ঘটনা শুধু সরকারের সুনাম ক্ষুণ্ণ করবে না, বরং নাগরিকদের মনে গভীর অনিশ্চয়তা ও আতঙ্ক সৃষ্টি করবে।
এই ধরণের অস্বচ্ছ অভিযান গণতন্ত্রকে দুর্বল করে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে আরও তীব্রভাবে আক্রমণাত্মক করে তোলে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে।
নাহিয়ান আহমেদ বিপ্লবকে তুলে নেওয়ার ঘটনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বাস্তবতার একটি প্রতিচ্ছবি।
পরিবার ও সমাজ প্রশ্ন তুলছে—কোথায় আইনের শাসন?
রাষ্ট্র কি তার নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে?
নাকি এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার একটি নতুন রূপ?
এখন সময় এসেছে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে স্বচ্ছভাবে জবাবদিহি করার।
অন্যথায় এই ধরণের ঘটনা গণতন্ত্র ও নাগরিক স্বাধীনতার প্রতি মানুষের আস্থা আরও কমিয়ে দেবে।
