 
                  চলতি বছরের প্রথম ৮ মাসে দেশে কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা এবং নির্যাতনের সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ধর্ষণ, খুন ও আত্মহত্যার ঘটনায় দেশের শিশু অধিকার সংকটে।
বাংলাদেশে কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতনের প্রেক্ষাপট দিকনির্দেশক ও উদ্বেগজনক। চলতি বছরের প্রথম আট মাসে দেশজুড়ে ৩৯০ কন্যাশিশু ধর্ষণ ও গণধর্ষণের শিকার হয়েছে। একই সময়ে ৫৪ কন্যাশিশু যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে, আর আত্মহত্যা করেছে ১০৪ জন শিশু। এই তথ্য তুলে ধরেছে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদন, যা তৈরি করতে সহায়তা করেছে এডুকো বাংলাদেশ।
প্রতিবেদনটি শুধু ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের পরিসংখ্যানই তুলে ধরে না, বরং অপহরণ, খুন এবং রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ও অন্তর্ভুক্ত করেছে।
চলতি বছরের আট মাসে ৩৪ জন শিশু অপহরণ ও পাচারের শিকার হয়েছে, যাদের মধ্যে ১৮ জন কন্যাশিশুকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
তবে ৮৩ জন কন্যাশিশুর খুন এবং ৫০ জন কন্যাশিশুর রহস্যজনক মৃত্যু, যার প্রকৃত কারণ জানা যায়নি, চিত্রটিকে আরও ভয়ঙ্কর করে তোলে।
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেটর সৈয়দা আহসানা জামান এ্যানি বলেছেন,
“রাষ্ট্র সংস্কারের মধ্য দিয়ে অবশ্যই নারীবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে।
যেন একজন নারী বা কন্যাশিশু যেকোনো সময় কোনো ধরনের সহিংসতার ভয় ছাড়াই ঘর-বাসা থেকে বের হতে পারেন এবং নির্বিঘ্নে পথ চলতে পারেন।
পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রেও নারীবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি।”
এই পরিসংখ্যান আমাদের দেশে শিশু অধিকার ও সুরক্ষা ব্যবস্থার দীর্ঘমেয়াদি ঘাটতির কথা স্পষ্ট করে।
শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রের দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে কার্যকর আইন প্রয়োগ, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং ন্যায়বিচারের দ্রুত ব্যবস্থা।
বাস্তবে, অনেক সময় ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের মামলা দীর্ঘ সময় ধরে বিচারহীন থাকে, যা অপরাধীদের শক্তিশালী করে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন,
শুধুমাত্র আইনি ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়; সমাজের মানসিকতার পরিবর্তনও জরুরি।
কন্যাশিশুদের প্রতি সহিংসতা বন্ধ করতে পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
স্কুল, কলেজ ও কমিউনিটি সেন্টারে সচেতনতা কর্মসূচি এবং আত্মরক্ষা প্রশিক্ষণ কার্যকর হতে পারে।
সংখ্যাগুলো স্পষ্ট করে দেখায় যে, দেশের শিশু অধিকার রক্ষার কাঠামো এখন সংকটাপন্ন।
ধর্ষণ, অপহরণ, খুন এবং আত্মহত্যা কেবল সামাজিক নৈতিকতার পতন নয়, এটি এক প্রকার জাতীয় নিরাপত্তা সংকট।
তাই রাষ্ট্রকে কেবল প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ নয়, বরং প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপে জোর দিতে হবে।
জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের প্রতিবেদনটি যেন আমাদেরকে এক সতর্ক বার্তা দেয়—শিশু অধিকার সংরক্ষণে এখনই সক্রিয় উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
নিরাপদ পরিবেশ, কার্যকর আইন প্রয়োগ এবং সামাজিক সচেতনতার সমন্বয়ই কন্যাশিশুদের জীবন রক্ষা করতে পারে এবং একটি নারী বান্ধব সমাজ গড়ে তুলতে পারে।
বাংলাদেশে কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা রোধে আজকের পদক্ষেপই আগামী প্রজন্মের জন্য নিরাপদ সমাজ নিশ্চিত করবে।
এই অগ্রাধিকার না দিলে, শিশুদের জীবন ও মানসিক বিকাশের উপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়বে, যা ভবিষ্যতের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করবে।

 
                         
         
         
        