 
                  তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক তৎপরতায় বাংলাদেশ কি নতুন অস্ত্র ব্যবসার ঘাঁটিতে পরিণত হচ্ছে? ড. ইউনুসের গ্রামীণ প্রতিষ্ঠানের সম্পৃক্ততা ঘিরে উঠছে প্রশ্ন। বিশ্লেষণ করছেন ভূরাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ আবারও বড় শক্তিগুলোর কূটনৈতিক হিসাব-নিকাশের কেন্দ্রে উঠে এসেছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহে তুরস্কের এক প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর আকস্মিক ঢাকা সফর, তার পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক তৎপরতা—সব মিলিয়ে এক জটিল কৌশলগত সমীকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এই সমীকরণের মূল লক্ষ্য—ভারত ও চীনের প্রভাবকে ভারসাম্যহীন করা এবং বাংলাদেশকে একটি আঞ্চলিক অস্ত্র উৎপাদন ও সরবরাহ ঘাঁটিতে রূপান্তর করা।
তুরস্ক গত কয়েক বছরে মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ায় তার প্রতিরক্ষা শিল্পের বাজার সম্প্রসারণে বিশেষ সাফল্য অর্জন করেছে।
উন্নত ড্রোন, সাঁজোয়া যান ও রাডার প্রযুক্তির মাধ্যমে তারা বৈশ্বিক অস্ত্র বাজারে নিজেদের জায়গা তৈরি করেছে।
সূত্রমতে, সম্প্রতি তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্প মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা ঢাকায় গোপন বৈঠক করেছেন।
আলোচনায় অংশ নিয়েছেন ড. ইউনুসের গ্রামীণ প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা, যারা শিল্প কাঠামো ও অর্থায়ন পরিকল্পনা নিয়ে মতবিনিময় করেছেন।
এতে প্রশ্ন উঠছে—এটি কি শুধুই শিল্প সহযোগিতা, নাকি অস্ত্রশিল্পের আড়ালে এক নতুন রাজনৈতিক বিনিয়োগ?
যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতা: সহযোগিতা চুক্তি না সামরিক প্রভাব বিস্তার?
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র প্রতিরক্ষা সংলাপ, সাম্প্রতিক সফর, এবং তথাকথিত “সিকিউরিটি কোঅপারেশন” চুক্তিগুলো এখন বিশ্লেষকদের নজরে।
ওয়াশিংটনের লক্ষ্য স্পষ্ট—দক্ষিণ এশিয়ায় একটি নতুন কৌশলগত ঘাঁটি তৈরি করা, যা ভারত ও চীনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে।
বাংলাদেশ সেই পরিকল্পনার কেন্দ্রে থাকলে, তার পররাষ্ট্রনীতি ও সার্বভৌমত্বের ওপর বিদেশি প্রভাব বাড়তে পারে।
মিয়ানমার সীমান্তে চলমান যুদ্ধ, রোহিঙ্গা ইস্যু এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের অস্থিতিশীলতা নতুন উদ্বেগের জন্ম দিচ্ছে।
গোয়েন্দা সূত্র বলছে, তুরস্ক বা তার সহযোগী প্রতিষ্ঠানের তৈরি অস্ত্র এখন সীমান্তের বিচ্ছিন্ন গোষ্ঠীগুলোর কাছে পৌঁছাচ্ছে।
এতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে, এবং প্রশ্ন উঠছে—সরকার কি পুরো বিষয়টি জানে, নাকি বিদেশি প্রভাবিত চুক্তিগুলোর আড়ালে এই অস্ত্রচক্র চলছে?
ড. ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে বিদেশি তহবিলনির্ভর প্রকল্পগুলোর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এসব প্রকল্পের অর্থনৈতিক কাঠামো ক্রমে এমন এক আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক তৈরি করছে, যেখানে অর্থনৈতিক সহযোগিতার ছদ্মবেশে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
যদি অস্ত্রশিল্প সম্পর্কিত আলোচনাও সেই নেটওয়ার্কের অংশ হয়, তবে তা বাংলাদেশের নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতির জন্য এক গভীর হুমকি।
জাতীয় স্বার্থে স্বচ্ছতা ও গণআলোচনা অপরিহার্য
বাংলাদেশ শান্তি ও উন্নয়নের পক্ষে, কিন্তু পরাশক্তির সামরিক আগ্রহ সেই নীতিকে বিপদের মুখে ফেলছে।
এই পরিস্থিতিতে প্রয়োজন—
- সংসদীয় আলোচনার মাধ্যমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা,
- অস্ত্রচুক্তি বা প্রতিরক্ষা সমঝোতা বিষয়ে জনগণকে অবহিত করা,
- এবং সর্বোপরি, জাতীয় স্বার্থকে বিদেশি কৌশলের ঊর্ধ্বে স্থান দেওয়া।
স্বাধীন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে নীতি ও নৈতিকতার ওপর, অস্ত্রশক্তির ওপর নয়।
বাংলাদেশ আজ এক নতুন মোড়ে দাঁড়িয়ে। একদিকে বিদেশি অর্থনৈতিক প্রলোভন, অন্যদিকে সার্বভৌম নীতির চ্যালেঞ্জ।
এখন প্রশ্ন একটাই—আমরা কি উন্নয়নের নাম করে অস্ত্র রাজনীতির খেলায় পুতুল হয়ে যাব, নাকি শান্তি ও স্বাধীনতার পথেই এগোব?
বাংলাদেশের কূটনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে এই প্রশ্নের উত্তরই।

 
                         
         
         
        