বিএনপির সাবেক মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের পরিবারের বাড়িতে যুবদল নেতাকর্মীদের চাঁদাবাজির অভিযোগ দলের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা ও নেতৃত্ব সংকটের নতুন ইঙ্গিত দিচ্ছে।
বিএনপির অভ্যন্তরীণ সংকট যেন দিন দিন আরও প্রকট হয়ে উঠছে। সর্বশেষ ঢাকায় ঘটে যাওয়া এক ঘটনার পর তা আরও স্পষ্ট হয়েছে। দলের সাবেক মহাসচিব মরহুম খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের পরিবারের বাড়িতে যুবদল নেতাকর্মীদের চাঁদাবাজির অভিযোগ শুধু একটি অপরাধমূলক ঘটনা নয়—এটি দলের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ও নেতৃত্ব কাঠামোর দুর্বলতারও এক প্রতিচ্ছবি।
খন্দকার দেলোয়ার হোসেন ছিলেন বিএনপির এক নির্ভরযোগ্য, স্থিতিশীল এবং নীতিনিষ্ঠ রাজনীতিক—যার পরিবার দলটির ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত।
সেই পরিবারের সদস্য তানজিন হামিদ মিতুলের কাছ থেকে যুবদল পরিচয়ে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ কেবল আর্থিক নয়, এটি দলীয় মূল্যবোধের অবক্ষয়ের ইঙ্গিতও বহন করে।
তিনি অভিযোগ করেছেন, “আমরা দেলোয়ার হোসেনের নাম বলার পরও তারা জোর করে টাকা নিয়েছে।”
এই বক্তব্যটি দলীয় শৃঙ্খলার কতটা ভাঙন ঘটেছে, তার এক করুণ চিত্র তুলে ধরে।
হাতিরঝিল থানায় লিখিত অভিযোগের পর পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।
কিন্তু বিএনপি নেতৃত্ব এখনও পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন,
“অভিযোগটি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। সত্যতা প্রমাণিত হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অন্যদিকে বিএনপির ভেতরে আলোচনা শুরু হয়েছে—কেন দলের তরুণ সংগঠনের সদস্যরা এমন কর্মকাণ্ডে যুক্ত হচ্ছে এবং কেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নীরব?
অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার দ্বন্দ্ব নাকি সংগঠনগত ভাঙন?
দলের এক জ্যেষ্ঠ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বীকার করেছেন,
“নিচু পর্যায়ে ব্যক্তিগত স্বার্থ, টেন্ডারবাজি, এবং ‘চাঁদা তোলার’ প্রবণতা ভয়াবহভাবে বাড়ছে।”
এই পরিস্থিতি কেবল বিএনপির জনসমর্থনই নয়, বরং সংগঠনগত ঐক্যকেও বিপন্ন করছে।
গত সপ্তাহে কক্সবাজারে বিএনপি নেতা লিয়াকত আলীর বাড়িতে গুলি হামলাও একই প্রবণতার অংশ বলে মনে করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে,
দলের ভেতর শৃঙ্খলার অভাব, নেতৃত্বের অনিশ্চয়তা এবং তরুণ নেতাদের মধ্যে প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা এমন অস্থিতিশীলতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
খন্দকার দেলোয়ার হোসেন ছিলেন বিএনপির ষষ্ঠ মহাসচিব—যিনি সংকটের সময় দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে ভূমিকা রেখেছিলেন।
তার পরিবার দীর্ঘদিন বিএনপির আদর্শের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও, এখন সেই ঘরেই দলীয় কর্মীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ—এটি একটি প্রতীকী সংকেতও বটে।
এ যেন পুরোনো নেতৃত্বের ঐতিহ্য ও নতুন প্রজন্মের অনিয়ন্ত্রিত রাজনীতির সংঘাত।
এই ঘটনা বিএনপির জন্য শুধু একটি ইমেজ-ক্রাইসিস নয়, বরং দলীয় পুনর্গঠনের অপরিহার্য সংকেত।
যদি দল দ্রুত তদন্ত করে কঠোর শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা না নেয়, তবে সাধারণ জনগণের কাছে বিএনপির নৈতিক অবস্থান আরও দুর্বল হয়ে পড়বে।
একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ বিভাজন ও অর্থকেন্দ্রিক রাজনীতির সংস্কৃতি দলে নতুন করে আস্থা সংকট তৈরি করবে।
খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের পরিবারের প্রতি এমন আচরণ শুধু একটি দুঃখজনক ঘটনা নয়—এটি বিএনপির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নৈতিক নেতৃত্বের শূন্যতার প্রতিফলন।
দল যদি দ্রুত নেতৃত্বের দায় ঠিকভাবে নির্ধারণ করে এবং সংস্কারমূলক পদক্ষেপ না নেয়, তবে ভবিষ্যতে এর রাজনৈতিক মূল্য আরও কঠিনভাবে দিতে হতে পারে।
