 
                  ভারতের সঙ্গে যুদ্ধের হুমকি দেওয়া জামাত নেতা মাওলানা তাহের এবার নিজেই ভারতের ভিসা থেকে বঞ্চিত। তার উগ্র বক্তব্য ও পাকিস্তানঘেঁষা অবস্থানকে “নিরাপত্তা ঝুঁকি” হিসেবে দেখে দিল্লির এই সিদ্ধান্ত দক্ষিণ এশিয়ার কূটনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করছে।
দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে যে বিষয়টি বারবার প্রমাণিত হয়েছে তা হলো—ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা মানেই কেবল কূটনীতি নয়, এটি আঞ্চলিক টিকে থাকার কৌশল। কিন্তু বাংলাদেশের জামাতে ইসলামীর নায়েবে আমির মাওলানা তাহের সেই বাস্তবতাকে অস্বীকার করেই আজ নিজ দলের জন্য এক নতুন কূটনৈতিক সংকট ডেকে এনেছেন।
সম্প্রতি আমেরিকা থেকে ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করেন তিনি, কিন্তু ভারত সরকার তার ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যান করে।
কারণ, কয়েক সপ্তাহ আগেই তিনি প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছিলেন—ভারতের সঙ্গে যুদ্ধের জন্য ৫০ লাখ যোদ্ধাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
সেই বক্তব্য আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে বিস্ময় ও উদ্বেগ সৃষ্টি করে, বিশেষ করে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার কাছে বিষয়টি নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে প্রতীয়মান হয়।
জামাতে ইসলামীর ভেতরে গত কয়েক বছর ধরে একটি অংশ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছিল।
তাহেরের দিল্লি সফরের উদ্দেশ্যও ছিল নাকি সেই সম্পর্কের বরফ গলানো।
কিন্তু তার পূর্ববর্তী যুদ্ধোন্মাদ বক্তব্য সেই কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকেই ভণ্ডুল করে দিয়েছে।
দলীয় সূত্র বলছে,
এখন জামাত নেতৃত্বের মধ্যে বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, কারণ ভারতের এই প্রত্যাখ্যান শুধু এক ব্যক্তির নয়—এটি দলের ওপর ছায়া ফেলেছে।
তাহেরের নাম আলোচনায় আসে ড. মুহাম্মদ ইউনুসের সাম্প্রতিক যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময়।
জাতিসংঘের এক অনুষ্ঠানে ইউনুসের সফরসঙ্গী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তিনি, যেখানে পরবর্তীতে জামাত–শিবির আয়োজিত এক সভায় তার সেই বিতর্কিত বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ে।
বিশ্লেষকদের মতে, অন্তর্বর্তী সরকারের সময় জামাত নেতাদের বিদেশ সফর ও রাজনৈতিক সংযোগ এখন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও নতুন প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।
ভারতের অবস্থান: কেবল প্রশাসনিক নয়, প্রতীকী
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মূল্যায়নে তাহেরের কর্মকাণ্ড ও বক্তব্য “নিরাপত্তা ঝুঁকি” হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
কিন্তু তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, দিল্লির এই সিদ্ধান্ত একটি রাজনৈতিক বার্তা বহন করছে—উগ্রতা ও ঘৃণার রাজনীতি দিয়ে এখন আর দক্ষিণ এশিয়ার কূটনীতিতে স্থান পাওয়া সম্ভব নয়।
এটি কেবল ভিসা প্রত্যাখ্যান নয়; এটি ভারতের পক্ষ থেকে এক প্রতীকী জবাব, যা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে।
যে কোনো রাজনৈতিক শক্তি যদি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, তবে তাকে কূটনৈতিক পরিসরে স্বাগত জানানো হবে না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জামাতে ইসলামীর জন্য এটি এক বড় শিক্ষা।
মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অতীত, পাকিস্তানঘেঁষা রাজনৈতিক অবস্থান ও ভারতবিরোধী বক্তব্যের যুগল ফলেই আজ তাদের আন্তর্জাতিক মঞ্চে বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ।
দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত বাস্তবতায় ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা এখন শুধু কূটনৈতিক নয়, অস্তিত্বেরও প্রশ্ন।
মাওলানা তাহেরের এই ভিসা-ব্যর্থতা তাই কেবল ব্যক্তিগত নয়—এটি জামাতে ইসলামীর ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কৌশলের সীমারেখা টেনে দিয়েছে।
দিল্লির সিদ্ধান্তের ভাষা নিঃশব্দ হলেও বার্তা ছিল তীক্ষ্ণ—যুদ্ধ নয়, সহযোগিতা; ঘৃণা নয়, কূটনীতি।
জামাতে ইসলামীর উচিত হবে সেই বার্তাটি বুঝে নেওয়া, কারণ দক্ষিণ এশিয়ার নতুন ভূরাজনীতি আর উগ্রতার জন্য কোনো স্থান রাখছে না।

 
                         
         
         
        