রাজশাহীতে দুটি চোরাই মোটরসাইকেলসহ ছাত্রদল নেতা রোহান ইসলামের গ্রেফতার তরুণ রাজনীতির নৈতিক সংকট ও রাজনৈতিক দলের দায়িত্বহীনতার প্রতিফলন।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার শান্ত গ্রামীণ প্রেক্ষাপটে যখন দুটি চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধারের ঘটনা প্রকাশ পেল, তখন বিষয়টি শুধু একটি অপরাধ সংবাদে সীমাবদ্ধ থাকেনি। কারণ গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি — রোহান ইসলাম, চারঘাট আলহাজ এম এ হাদী ডিগ্রি কলেজ শাখা ছাত্রদলের সভাপতি। অর্থাৎ তিনি একজন রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তি। এই ঘটনা তাই আইনশৃঙ্খলার প্রশ্ন ছাড়িয়ে তরুণ রাজনীতির নৈতিক সংকট ও সংগঠনগুলোর দায়বদ্ধতার প্রশ্ন উত্থাপন করেছে।
৪ অক্টোবর গভীর রাতে রাজশাহীর টি-বাঁধ এলাকায় জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সহায়তায় বাঘা থানা পুলিশ রোহান ইসলামকে গ্রেফতার করে।
তার কাছ থেকে একটি চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার হয়, এবং জিজ্ঞাসাবাদে আরেকটি মোটরসাইকেল চুরির কথাও স্বীকার করেন তিনি।
তার দেওয়া তথ্যে চারঘাট উপজেলার বাবুপাড়া এলাকা থেকে দ্বিতীয় মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হয়।
পুলিশের তৎপরতা এই ঘটনায় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে প্রশংসনীয়।
সাধারণ ডায়েরি (জিডি) থেকে শুরু করে ডিবির সহযোগিতায় দ্রুত অভিযান চালিয়ে চুরি হওয়া মোটরসাইকেল উদ্ধার ও অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা — স্থানীয় প্রশাসনের দক্ষতার একটি দৃষ্টান্ত।
তবে এই সাফল্যের আড়ালেও বড় প্রশ্নটি থেকে যায়:
কেন ছাত্র রাজনীতির নেতৃত্ব পর্যায়ে অপরাধমূলক প্রবণতা এতটা গভীরে প্রবেশ করেছে?
রাজনৈতিক সংস্কৃতির নৈতিক অবক্ষয়
ছাত্র রাজনীতি একসময় ছিল সমাজ পরিবর্তনের নেতৃত্বদাতা শক্তি।
কিন্তু এখন তা অনেকাংশে পদ-পদবির প্রতিযোগিতা, প্রভাব বিস্তার ও অর্থনৈতিক সুবিধা অর্জনের মাধ্যম হয়ে উঠেছে।
রোহানের মতো অনেক তরুণ রাজনৈতিক কর্মী নিজেদের আদর্শ নয়, বরং সুবিধাবাদী চক্রের হাতিয়ার হিসেবে গড়ে উঠছে।
এটি শুধু বিএনপি নয়—সব প্রধান ছাত্রসংগঠনের ক্ষেত্রেই এক গভীর নৈতিক অবক্ষয়ের প্রতিফলন।
ছাত্রসংগঠনের নেতৃত্ব দেয়ার আগে যদি ন্যূনতম নৈতিক যাচাই বা রাজনৈতিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকত, তবে এই ধরনের ঘটনা কমত।
রাজনৈতিক দলগুলো শুধু মিছিল-মিটিংয়ের মানুষ তৈরিতে ব্যস্ত, অথচ নীতি, আদর্শ ও নাগরিক দায়বোধ শেখানোর জায়গা তৈরি করছে না।
একজন ছাত্রদল নেতার এমন কর্মকাণ্ড সাধারণ মানুষকে ছাত্র রাজনীতি থেকে আরও বিমুখ করে তোলে।
সমাজে এটি প্রমাণ করে যে, রাজনীতি মানেই ক্ষমতা ও অপরাধের মেলবন্ধন — যা গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির জন্য ভয়াবহ সংকেত।
রোহান ইসলামের গ্রেফতার একটি ব্যক্তিগত অপরাধের ঘটনা নয়; এটি বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির নৈতিক দেউলিয়াত্বের আরেকটি প্রতিচ্ছবি।
যদি এখনই রাজনৈতিক দলগুলো আত্মসমালোচনার সাহস না দেখায়, তবে ভবিষ্যতের নেতৃত্ব আরও গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে।
