 
                  জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম নির্বাচন কমিশনের প্রতীক তালিকায় মূলা, বেগুন, খাট ইত্যাদি প্রতীক নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন নির্বাচন কমিশনের রুচিবোধ ও নিরপেক্ষতা নিয়েও।
বাংলাদেশের নির্বাচনী সংস্কৃতিতে প্রতীক শুধু চিহ্ন নয়, এটি রাজনৈতিক পরিচয়ের প্রতীকও। কিন্তু সেই প্রতীকের বিষয়টি নিয়েই নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)–এর উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।
গত ৫ অক্টোবর (রোববার) পঞ্চগড়ের শের-ই-বাংলা পার্কে স্থানীয় মসজিদ কমিটির সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রতীক তালিকা নিয়ে।
সারজিস আলমের বক্তব্যে স্পষ্ট—
তিনি মনে করেন, মূলা, বেগুন, খাট বা থালা-বাটি জাতীয় প্রতীক কেবল হাসির খোরাক জোগায়, যা একটি রাজনৈতিক দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে পারে।
তাঁর প্রশ্ন,
“নির্বাচন কমিশনের রুচিবোধ এতটাই নিচে নেমে গেছে যে তারা এমন প্রতীক তালিকাভুক্ত করেছে?
দেশে কি প্রতীকের অভাব পড়েছে?”
তিনি আরও বলেন, ইসি তাদের “রুচিহীনতা ও স্বেচ্ছাচারিতার” প্রকাশ ঘটাচ্ছে।
তাঁর অভিযোগ—ইসি কারও প্রভাব বা নির্দেশে এমনভাবে আচরণ করছে, যা একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনী ব্যবস্থার জন্য বিপজ্জনক বার্তা বহন করে।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক প্রতীক নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়।
অতীতে ‘চশমা’, ‘টেবিল ফ্যান’, এমনকি ‘মোবাইল ফোন’ প্রতীক নিয়েও বিভ্রান্তি ও অভিযোগ শোনা গেছে।
তবে এবারের বিতর্কটি কেবল প্রতীক নয়, বরং নির্বাচন কমিশনের নৈতিক মান ও নান্দনিক রুচি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।
সারজিস আলমের বক্তব্য রাজনৈতিকভাবে ইঙ্গিতবহ।
তিনি যে ভাষায় ইসিকে অভিযুক্ত করেছেন, তা নির্দেশ করে এনসিপি নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থানকে শক্তভাবে চিহ্নিত করতে চাইছে, বিশেষ করে আসন্ন নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে।
তিনি ঘোষণা দেন—
“আমরা শাপলা নিয়েই নির্বাচন করব।
আইনগত কোনো বাধা না থাকায় এনসিপি অন্য কোনো প্রতীক ভাবছে না।”
অর্থাৎ এনসিপি এখন প্রতীকের মাধ্যমে নিজেদের পরিচ্ছন্ন, সংস্কারমুখী রাজনৈতিক চেতনার প্রতীকী বার্তা ছড়াতে চাইছে।
‘শাপলা’ প্রতীকটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক অভিধানে বরাবরই একটি শান্তি ও পবিত্রতার প্রতীক, যা দলটি নিজেদের নৈতিক অবস্থানের সঙ্গে যুক্ত করতে চায়।
ইসির রুচিবোধ বনাম গণতান্ত্রিক মান
নির্বাচন কমিশন শুধু একটি প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান নয়; এটি দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের রক্ষক।
তাই প্রতীক নির্ধারণের ক্ষেত্রেও তাদের উচিত রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও নান্দনিক বিবেচনা করা।
যখন কোনো প্রতীক হাস্যরসের জন্ম দেয়, তখন তা ভোটারদের মনস্তত্ত্বে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে—একটি দলকে “গাম্ভীর্যহীন” হিসেবে উপস্থাপন করতে পারে।
তবে সমালোচকরা বলছেন, প্রতীকের ওপর অতিরিক্ত গুরুত্ব না দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত নীতিগত অবস্থান ও সংগঠনের শক্তি বৃদ্ধি করা।
কারণ ভোটার শেষ পর্যন্ত প্রতীকের চেয়ে বেশি বিবেচনা করে নেতৃত্ব ও কর্মসূচিকে।
এনসিপির এই প্রতীক-সংকট বাংলাদেশের নির্বাচনী সংস্কৃতিতে একটি নতুন দিক উন্মোচন করেছে।
একদিকে এটি নির্বাচন কমিশনের নান্দনিক ও নৈতিক দায়বদ্ধতার প্রশ্ন তুলেছে, অন্যদিকে এটি ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর পরিচিতি ও সম্মান রক্ষার লড়াইয়ের প্রতিফলন।
যেভাবে সারজিস আলম বলেছেন,
“প্রয়োজনে রাজনৈতিকভাবেও আমরা এর মোকাবিলা করব।”
এটি নিছক ক্ষোভ নয়—বরং আসন্ন নির্বাচনের আগমুহূর্তে ইসির সিদ্ধান্তের ওপর রাজনৈতিক আস্থা ও গণতান্ত্রিক স্বচ্ছতার একটি বড় প্রশ্নচিহ্ন।

 
                         
         
         
        