দখলদার ইউনূস সরকারের সময়ে বিতর্কিতভাবে লাইসেন্স পাওয়া ‘লাইভ টিভি’-র পেছনে রয়েছে যমুনা টিভির সিইও ফাহিম আহমেদ। এনসিপি নেতার নামে লাইসেন্স হলেও আসল নিয়ন্ত্রণ তার হাতে বলেই অভিযোগ।
দখলদার ইউনূস সরকারের বিতর্কিত মিডিয়া নীতির ফলশ্রুতিতে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে সম্প্রতি অনুমোদিত দুটি টেলিভিশন চ্যানেল—‘নেক্সট টিভি’ ও ‘লাইভ টিভি’।
সরকারি নথিতে এই দুটি চ্যানেলের লাইসেন্সধারী হিসেবে দেখা গেলেও, বাস্তব চিত্র ভিন্ন। বিশেষ করে ‘লাইভ টিভি’—এর আড়ালে যে ব্যক্তি প্রকৃত মালিকানা ও প্রভাব খাটাচ্ছেন, তিনি হচ্ছেন যমুনা টেলিভিশনের সিইও ফাহিম আহমেদ, যিনি বর্তমানে মিডিয়া অঙ্গনে “মিডিয়া মাফিয়া” নামে পরিচিত।
লাইভ টিভির লাইসেন্সধারী হিসেবে নাম আছে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য আরিফুর রহমানের।
কিন্তু বিভিন্ন সূত্রে জানা যাচ্ছে, এই লাইসেন্সের মূল উদ্যোক্তা এবং অর্থায়নের উৎস ফাহিম আহমেদ।
তিনি বর্তমানে ইউনূসের ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং ‘গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন’-এর সদস্য হিসেবেও রয়েছেন—যা তাকে নতুন টেলিভিশন লাইসেন্স প্রাপ্তির সুযোগ দিয়েছে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায়।
চট্টগ্রাম কলেজের সাবেক শিবির কর্মী হিসেবে যাত্রা শুরু করা ফাহিম আহমেদের উত্থান মূলত ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়,
যখন তিনি ভোলার এমপি নুরনবী চৌধুরী শাওনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে যমুনা টিভিতে প্রভাব বিস্তার শুরু করেন।
অল্প সময়ের মধ্যেই ফাহিম আহমেদ পরিণত হয়েছেন শতকোটি টাকার মালিকে।
জানা গেছে, তিনি বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, পূর্বাচলে প্রায় ৬৫ কাঠা জমি এবং দুবাইয়ে স্বর্ণের ব্যবসাসহ একাধিক গোপন বিনিয়োগ গড়ে তুলেছেন—সবকিছু মাত্র এক বছরের ব্যবধানে।
ফাহিম আহমেদের ক্ষমতার উত্থান শুরু হয় আওয়ামী লীগ সরকারের সময়, ভোলার এমপি নুরনবী চৌধুরী শাওনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের সুবাদে।
সেই সময় থেকেই তিনি যমুনা টেলিভিশনে শিবির ঘরানার কর্মীদের অগ্রাধিকারভিত্তিতে নিয়োগ দিতে শুরু করেন, যা মিডিয়া অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।
অভ্যন্তরীণ অন্ধকার: রক্ষিতা কেলেঙ্কারি ও ক্ষমতার রাজনীতি
যমুনা টিভির অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো জানায়, প্রেজেন্টার রোকসানা আনজুমান নিকোল ও বৃষ্টি আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে ফাহিম আহমেদের ঘনিষ্ঠ পরিমণ্ডলে রয়েছেন।
অনেকে তাদের ‘রক্ষিতা’ বলেও উল্লেখ করেন।
কর্মীদের ভাষায়, নিকোলকে বলা হয় “যমুনা টিভির আম্মু”, আর ফাহিমকে “যমুনা টিভির আব্বু”—যা যমুনা টিভির ওপেন সিক্রেট হিসেবেই পরিচিত।
অভিযোগ রয়েছে, চ্যানেলের প্রকৃত মালিক শামীম আহমেদের আস্থাভাজন হতে নারীদের ব্যবহার করেই ফাহিম আহমেদ ধীরে ধীরে যমুনা টিভির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে তুলে নেন।
২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের সময় পুলিশি নজর এড়াতে যমুনা টিভির স্টিকারযুক্ত দুটি নোয়া গাড়ি ব্যবহার করা হয়।
ওই গাড়িগুলোতে হাসনাত, সার্জিস, মাহফুজ, নাহিদ, সজিব ভূঁইয়াসহ আন্দোলন-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চলাচলের সুযোগ করে দিয়েছিলেন স্বয়ং সিইও ফাহিম আহমেদ।
সম্প্রতি দখলদার ইউনূস প্রশাসন দুইটি নতুন টেলিভিশন চ্যানেলের সম্প্রচার অনুমোদন দিয়েছে, যার একটি ‘নেক্সট টিভি’ এবং অন্যটি ‘লাইভ টিভি’।
- নেক্সট টিভির লাইসেন্স পেয়েছেন এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক মো. আরিফুর রহমান তুহিন।
- লাইভ টিভির লাইসেন্স পেয়েছেন নাগরিক কমিটির সদস্য আরিফুর রহমান।
তবে মিডিয়া বিশ্লেষকদের মতে, লাইভ টিভির আসল মালিকানা আরিফুর রহমানের নয়, বরং যমুনা টিভির সিইও ফাহিম আহমেদের হাতে।
আর এই লাইসেন্স বিতরণকে “নীতিবহির্ভূত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” বলেই মনে করছেন গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞরা।
সবশেষে বলা যায়, বাংলাদেশের বর্তমান গণমাধ্যম খাতে প্রভাব, দুর্নীতি, ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক ক্ষমতার এক জটিল চিত্রই ফুটে উঠেছে এই ঘটনার মাধ্যমে।
একদিকে দখলদার সরকারের পক্ষপাতমূলক লাইসেন্স বণ্টন, অন্যদিকে মিডিয়া মাফিয়াদের অন্ধকার প্রভাব—
সব মিলিয়ে স্বাধীন সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের সুনাম আজ গভীর সংকটে।
