ফেনীর সোনাগাজীতে পুলিশের অভিযান চলাকালে যুবদলকর্মীর নেতৃত্বে অস্ত্র ও ওয়াকিটকি ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নতুন সংকেত। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক প্রভাব, গ্রামীণ সন্ত্রাস এবং প্রশাসনিক দুর্বলতা নিয়ে বিশ্লেষণ।
ফেনীর সোনাগাজীতে পুলিশের অভিযানের সময় ছিনিয়ে নেয়া অস্ত্র ও ওয়াকিটকি উদ্ধার হয়েছে, কিন্তু এই ঘটনার সামাজিক ও রাজনৈতিক অভিঘাত এখনো থামেনি। একদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর সরাসরি হামলা, অন্যদিকে রাজনৈতিক পরিচয়ে ‘গ্রামীণ সন্ত্রাসের পুনরুত্থান’—দুটি বিষয়ই একসঙ্গে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
ঘটনাটি ঘটে মঙ্গলবার ভোরে, যখন সোনাগাজী মডেল থানার দুই এএসআই সাইদুর রহমান ও মোফাজ্জল হোসেন নেতৃত্বে পশ্চিম আহম্মদপুর গ্রামে যুবদলকর্মী জাহিদুল ইসলাম রিপনকে ধরতে যান।
রিপন ও তার স্বজনরা শুধু পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করেননি, বরং হামলা চালিয়ে একটি র্শটগান ও ওয়াকিটকি ছিনিয়ে নেন।
এমন ঘটনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্তৃত্ব ও সক্ষমতার ওপর সরাসরি প্রশ্ন তোলে।
রিপন ও আরিফ—দুজনেই স্থানীয়ভাবে বিএনপি-যুবদলের কর্মী হিসেবে পরিচিত।
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রশাসনবিরোধী তৎপরতায় তাদের সম্পৃক্ততা নিয়ে স্থানীয় সূত্রের নানা ব্যাখ্যা থাকলেও, মূল ইঙ্গিত একটাই—
রাজনীতির ছত্রছায়ায় গ্রামের প্রান্তিক এলাকায় ‘ক্ষমতা-নিয়ন্ত্রণের’ এক অঘোষিত লড়াই চলছে।
যুবদল বা ছাত্রদলের স্থানীয় ইউনিটগুলো দীর্ঘদিন ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টার্গেটে থাকলেও,
সরাসরি পুলিশের অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার মতো ঘটনা রাজনৈতিক সংঘাতকে এক নতুন মাত্রা দিয়েছে।
রিপনের পরিবার অভিযোগ করেছে, পুলিশ ভোরে ঘরে ঢুকে গালাগালি ও ভাঙচুর চালায়, যা থেকে ধস্তাধস্তির সূত্রপাত।
এমন অভিযোগ গ্রামীণ সমাজে নতুন নয়।
তবে পুলিশের দাবি—তারা আইনসম্মত অভিযান চালাচ্ছিল।
এখানে প্রশ্ন উঠছে—গ্রামীণ জনপদে আইন প্রয়োগের ধরন ও পুলিশি আচরণের মধ্যে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, সেটিই কি ‘প্রতিরোধ’ বা ‘উগ্রতা’র জন্ম দিচ্ছে?
এই দ্বন্দ্বে যদি রাজনৈতিক প্রভাব মিশে যায়, তাহলে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাঠামো আরও দুর্বল হয়ে পড়ে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মনোবল ও প্রশাসনিক বার্তা
ওসি সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, এ ঘটনায় দুই এএসআইসহ ছয় পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন, অস্ত্র ও ওয়াকিটকি উদ্ধার হয়েছে এবং আসামিদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন,
‘অস্ত্র ছিনতাই’ পুলিশের জন্য শুধু একটি অপরাধ নয়, বরং এটি মনোবলের ওপর আঘাত।
মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা যদি নিরাপত্তাহীনতা বোধ করেন, তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষমতা দুর্বল হয়।
ফেনী—এক সময় আওয়ামী লীগ-বিএনপি সংঘর্ষের অন্যতম হটস্পট।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তুলনামূলক শান্ত থাকলেও এই ঘটনার মাধ্যমে আবারও পুরনো রাজনৈতিক উত্তেজনার ইঙ্গিত মিলছে।
রাজনৈতিক প্রভাব, গ্রামীণ সন্ত্রাস ও প্রশাসনিক দুর্বলতা—এই ত্রিমাত্রিক সমস্যার সমাধান না হলে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকানো কঠিন হবে।
ফেনীর এই ঘটনা কেবল একটি থানার মামলা নয়; এটি রাষ্ট্রযন্ত্রের শৃঙ্খলা ও নাগরিক নিরাপত্তার মাপকাঠি।
যুবদলকর্মীর হাতে পুলিশের অস্ত্র চলে যাওয়া মানে আইনশৃঙ্খলার নিয়ন্ত্রণ প্রশ্নবিদ্ধ হওয়া।
এই ঘটনায় যে বার্তা এসেছে, তা স্পষ্ট—রাজনীতির আড়ালে গ্রামীণ সন্ত্রাস যদি দমন না করা যায়, তবে রাষ্ট্রের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা আরও ক্ষয়ে যাবে।
