 
                  বিশ্বব্যাঙ্কের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার বেড়ে ২১.২ শতাংশে পৌঁছেছে। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, মূল্যস্ফীতি এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এই বৃদ্ধির মূল কারণ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার আবারও বেড়েছে — ২১.২ শতাংশে। বিশ্বব্যাঙ্কের সর্বশেষ প্রতিবেদনের এই তথ্য শুধু পরিসংখ্যান নয়, বরং এটি বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি। গত বছরের তুলনায় দারিদ্র্যের হার বেড়েছে ০.৭ শতাংশ, যা নির্দেশ করে—অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে অর্থনীতির পুনরুদ্ধার এখনো কাঙ্ক্ষিত গতি পায়নি।
অগাস্ট ২০২৪-এ দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, প্রশাসনিক অনিশ্চয়তা ও নীতি বাস্তবায়নের ধীরগতি অর্থনীতিকে দুর্বল করে তুলেছে।
বিশ্বব্যাঙ্কের রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও বৈশ্বিক মূল্যবৃদ্ধি বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর দ্বিগুণ চাপ তৈরি করেছে।
যেখানে একসময় দেশ দারিদ্র্য হ্রাসের ক্ষেত্রে “সফলতার মডেল” হিসেবে প্রশংসিত হয়েছিল, সেখানে এখন দারিদ্র্যের হার ২১.২ শতাংশে পৌঁছানো উদ্বেগজনক।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আগস্ট ২০২৫-এ সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৮.৩ শতাংশে নেমেছে—যা এক অর্থে ইতিবাচক।
কিন্তু একই সঙ্গে আয়ের প্রবৃদ্ধি থেমে গেছে, চাকরির বাজার সংকুচিত, আর পণ্যদ্রব্যের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।
অর্থাৎ, সংখ্যাগতভাবে মূল্যস্ফীতি কমলেও জীবনযাত্রার ব্যয় বাস্তবে কমেনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যখন মাত্র ৪.৮ শতাংশে সীমিত, তখন প্রকৃত ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির আশা করাও অবাস্তব।
রাজনৈতিক অস্থিরতা: উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হওয়ার মূল কারণ
বিশ্বব্যাঙ্ক সরাসরি উল্লেখ করেছে—রাজনৈতিক অস্থিরতা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বড় প্রতিবন্ধক।
বিদেশি বিনিয়োগ স্থবির, উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর গতি মন্থর, আর বৈদেশিক রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়ছে।
একজন অর্থনীতিবিদ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,
“বর্তমান সরকারের নীতিনির্ধারণে স্থিতিশীলতা নেই। বিনিয়োগকারীরা অপেক্ষা করছে—নির্বাচন কবে হবে, রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন হয়। এই অনিশ্চয়তা অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিচ্ছে।”
বিশ্বব্যাঙ্কের প্রতিবেদনে আশাবাদের কিছু ইঙ্গিতও আছে।
তারা মনে করে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরলে ২০২৬-২৭ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬.৩ শতাংশে উঠতে পারে।
অর্থাৎ, এই সংকট অতিক্রমযোগ্য—যদি সরকার দ্রুত বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করে এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ পুনর্গঠন করতে পারে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকার যদি সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয় বাড়ায়, কৃষিতে ভর্তুকি পুনর্বিন্যাস করে এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের পুনরুজ্জীবিত করে, তবে এই প্রবণতা উল্টানো সম্ভব।
বিশ্বব্যাঙ্কের এই সতর্কতা বাংলাদেশের জন্য একটি বাস্তব সংকেত।
দারিদ্র্যের হার বাড়া মানে শুধু সংখ্যাগত ব্যর্থতা নয়, বরং এটি সাধারণ মানুষের জীবনের মান ও সামাজিক স্থিতিশীলতার ওপর গভীর প্রভাব ফেলে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ—অর্থনৈতিক আস্থা পুনর্গঠন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা।
অন্যথায়, বাংলাদেশের দারিদ্র্যমুক্তির স্বপ্ন আরও দূরে সরে যাবে।

 
                         
         
         
        