 
                  জামালপুরে স্কুলে তালা ঝুলিয়ে দিলেন স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা, আতঙ্কে শিক্ষক-শিক্ষার্থী—এ ঘটনাই বলে দিচ্ছে, রাজনৈতিক চাঁদাবাজি কীভাবে শিক্ষার পরিবেশকে গ্রাস করছে।
জামালপুর সদর উপজেলার দিগপাইত ইউনিয়নের সাইফুল ইসলাম মেধা সিঁড়ি মডেল স্কুলে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক ঘটনাটি বাংলাদেশের বর্তমান সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতার এক নগ্ন প্রতিচ্ছবি। স্বেচ্ছাসেবক দলের স্থানীয় সভাপতি মকবুল হোসেন (ভুট্টো) কর্তৃক চাঁদা না পেয়ে স্কুলে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার এই ঘটনা শুধু একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নয়, পুরো সমাজকে গভীর প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিশেষত একটি প্রাথমিক বা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, যেখানে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মানসিক বিকাশ ও জ্ঞানচর্চা গড়ে ওঠার কথা, সেখানে রাজনৈতিক প্রভাব ও চাঁদাবাজি—
এ যেন নৈতিক পতনের এক ভয়াল ইঙ্গিত।
বাংলাদেশে শিক্ষাঙ্গন সব সময়ই রাজনীতির প্রভাব থেকে মুক্ত নয়।
শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে স্কুল কমিটি গঠন—সব জায়গায় রাজনৈতিক পরিচয় যেন অঘোষিত নিয়ামক।
এই ঘটনা তারই চরম রূপ, যেখানে একজন রাজনৈতিক নেতা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নিজের প্রভাব বিস্তারের যন্ত্রে পরিণত করেছেন।
এটি শুধু প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয়, বরং একটি গভীর নৈতিক সংকট।
কারণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া মানে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া।
অভিভাবক ও শিক্ষকদের ক্ষোভ স্বাভাবিক।
একজন প্রধান শিক্ষক যখন বলেন,
“এমন অমানবিক আচরণ মেনে নেওয়া যায় না”—তখন তার কণ্ঠে শুধু একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তার ক্ষোভ নয়, বরং দেশের সাধারণ নাগরিকের অসহায়ত্বও ধ্বনিত হয়।
শিক্ষার্থীদের মনে যে ভয় ও হতাশা তৈরি হয়েছে, তা তাদের মানসিক বিকাশে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলবে।
একটি শিশুর মনে যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নিরাপদ মনে না হয়, তবে তার ভবিষ্যৎও নিরাপদ থাকে না।
প্রশাসনিক উদাসীনতা ও রাজনৈতিক দায়
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বক্তব্য—
“এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি”—এই মন্তব্য প্রশাসনিক উদাসীনতারই ইঙ্গিত বহন করে।
এমন ঘটনায় তদন্ত শুরু হওয়ার জন্য অভিযোগের অপেক্ষা করা মানে অন্যায়কে সময় দেওয়া।
অন্যদিকে, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের “পর্যবেক্ষণ চলছে” মন্তব্যটিও রাজনৈতিক দায় এড়ানোর কৌশল।
বাস্তবে, রাজনৈতিক দলগুলো যদি নিজেদের কাঠামোর মধ্যে চাঁদাবাজির মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কঠোর ব্যবস্থা না নেয়,
তবে এমন ঘটনা ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাবে।
জামালপুরের এই ঘটনা কেবল একটি জেলার খবর নয়; এটি গোটা দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় রাজনৈতিক প্রভাবের প্রতীক।
আজ চাঁদা না দেওয়ায় স্কুলে তালা, কাল হয়তো শিক্ষক বদলি, পরশু হয়তো ছাত্রলীগ-বিএনপি সংঘর্ষে শ্রেণিকক্ষ বন্ধ—এভাবেই শিক্ষার মূল ভিত্তি ধ্বংসের পথে।
রাষ্ট্র, প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলগুলোকে এখনই ভাবতে হবে—যদি শিক্ষাঙ্গনও চাঁদাবাজির শিকার হয়, তবে জাতি কোথায় দাঁড়াবে?

 
                         
         
         
         
         
        