 
                  সাবেক সংসদ সদস্য ও বিশ্লেষক গোলাম মাওলা রনি বলেছেন, “যেদিকে তাকাই, শুধু লাশ ভাসছে।” তাঁর এই বক্তব্য বর্তমান বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা, নৈতিকতা ও রাষ্ট্রীয় সংকটের গভীর বাস্তবতা উন্মোচন করছে।
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য ও বিশ্লেষক গোলাম মাওলা রনির বক্তব্য সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন তুলেছে। এক টেলিভিশন টকশোতে তাঁর উচ্চারিত কথাগুলো— “যেদিকে তাকাই, শুধু লাশ ভাসছে”— কেবল আবেগঘন অভিব্যক্তি নয়, বরং রাষ্ট্রীয় অবক্ষয়ের এক গভীর প্রতিচ্ছবি।
রনি বলেন, “আজ এই ঢাকা শহরে এত চাপাতি, এত অন্যায়, এত ঘুষ, এগুলো নিয়ে আমরা কথা বলছি না।
কিশোররা রাতে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে, নির্বিচারে মানুষ কুপিয়ে হত্যা করছে—পুলিশ হোক বা আমলা—কেউ রেহাই পাচ্ছে না।”
এই বর্ণনা কেবল রাজধানী নয়, বরং গোটা দেশের নিরাপত্তা, শাসন ও নৈতিকতার অবক্ষয়কে প্রতিফলিত করছে।
রনি অক্টোবর মাসকে আখ্যায়িত করেছেন “ব্ল্যাক অক্টোবর” হিসেবে।
তাঁর মতে, “গত ১৪ মাসের মতো ভয়াবহ সময় এর আগে কখনো আসেনি।”
এই মন্তব্য কেবল রাজনৈতিক হতাশার প্রকাশ নয়; এটি এমন এক সামাজিক মনস্তাত্ত্বিক সংকটের বার্তা, যেখানে মানুষ রাষ্ট্রের প্রতি আস্থা হারাচ্ছে।
রনির ভাষায়,
“যে রাত ঘুমাতে দেয় না, যে রাত স্বপ্ন দেখতে দেয় না”—এই বাক্যগুলো প্রতীক হয়ে উঠেছে এক জাতির সম্মিলিত বিষণ্নতার।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সহিংসতা, ক্রমবর্ধমান হত্যাকাণ্ড, অর্থনৈতিক চাপ, ও প্রশাসনিক ভাঙন এই “ব্ল্যাক অক্টোবর” ধারণাকে বাস্তব রূপ দিচ্ছে।
দেশজুড়ে নৃশংস হত্যাকাণ্ড, ছিনতাই, রাজনৈতিক প্রতিশোধ, এমনকি শিশু ও কিশোর অপরাধের উত্থান—সবকিছুই এক গভীর নৈতিক ধসের ইঙ্গিত।
রনি উল্লেখ করেছেন, “১৯৭১ থেকে আজ পর্যন্ত রাষ্ট্রটাকে বিভিন্নভাবে দেখেছি, কিন্তু এরকম সময় কখনো আসেনি।”
এ বক্তব্য একটি ঐতিহাসিক তুলনা—যেখানে ১৯৭১ সালের যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ আজ স্বাধীন রাষ্ট্র হয়েও আত্মিক ও প্রশাসনিকভাবে অসহায় অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে।
অতীতে সামরিক শাসন, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক দমননীতি দেশের সামাজিক কাঠামোকে ক্ষতবিক্ষত করেছিল।
কিন্তু আজকের পরিস্থিতি আরও জটিল—এখন আর একক ক্ষমতার দমন নয়, বরং সমাজজুড়ে ছড়িয়ে পড়া নৈতিক শূন্যতা রাষ্ট্রকে বিপন্ন করে তুলেছে।
রাষ্ট্রের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা
রনি যে প্রশ্ন তুলেছেন—
“যে মানুষগুলোকে আমি সারাজীবন সান্ত্বনা দিয়েছি, এখন সান্ত্বনা দেব কীভাবে?”—এটি একটি প্রজন্মের হতাশা ও রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতার প্রতিফলন।
নাগরিকেরা এখন বিশ্বাস হারাচ্ছে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান, আইন, এমনকি ন্যায়বিচারের প্রতি।
ফলে ভয়, অনিশ্চয়তা ও ক্ষোভ—এই তিনটি অনুভূতি মিলে এক অদৃশ্য সামাজিক অরাজকতা তৈরি করছে।
গোলাম মাওলা রনির বক্তব্য হয়তো বিতর্কিত, কিন্তু অস্বীকার করা যায় না যে তিনি যে চিত্র এঁকেছেন তা একটি নীরব বিপর্যয়ের আভাস।
যখন লাশ নদীতে ভাসে, বনে পড়ে থাকে, আর মানুষ নৈতিকভাবে মরে যায়—তখন রাষ্ট্রের অস্তিত্ব কেবল প্রশাসনিক নয়, মানবিক প্রশ্নেও দাঁড়িয়ে যায়।
“ব্ল্যাক অক্টোবর” হয়তো কেবল একটি রূপক, কিন্তু এটি আজকের বাংলাদেশের বাস্তবতারই প্রতিচ্ছবি।
রাষ্ট্র যদি এই অন্ধকার থেকে আলোর পথ না খোঁজে, তবে রনির এই সতর্কবাণী ইতিহাসে পরিণত হবে এক অবক্ষয়ের ঘোষণাপত্রে।

 
                         
         
         
        