 
                  বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তারেক রহমানের ভিত্তিহীন মন্তব্যকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির অপচেষ্টা বলে নিন্দা জানিয়েছে আওয়ামী লীগ।
বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও লন্ডনে পলাতক দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি তারেক রহমানের মন্তব্য ঘিরে আবারও রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ ছড়িয়েছে। আওয়ামী লীগ এক তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে— তাদের ভাষায়, “তারেক রহমানের বক্তব্য অযৌক্তিক, অসংলগ্ন, মনগড়া এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে করা হয়েছে।”
তারেক রহমানের এই মন্তব্যকে আওয়ামী লীগ কেবল রাজনৈতিক বক্তব্য হিসেবে নেয়নি; বরং তারা দেখছে এটি এক ধরনের “মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ”—
যেখানে অতীতের ব্যর্থ রাজনীতি ও বিদেশনির্ভর কূটকৌশলের পুনরাবৃত্তি ঘটছে।
দলটির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিএনপি অতীতের লুটপাট-তন্ত্রকে বৈধতা দিতে চায় এবং তারেক রহমান সেই পুরনো ধারা পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছেন।
আওয়ামী লীগের বিবৃতিতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো নেতৃত্বের নৈতিকতা প্রশ্নে জোর দেওয়া।
তারা উল্লেখ করেছে, একজন দণ্ডপ্রাপ্ত, দুর্নীতি ও মানিলন্ডারিং মামলায় সাজাপ্রাপ্ত নেতা দেশের কল্যাণে কোনো দিকনির্দেশনা দিতে পারেন না।
এই বক্তব্য কেবল দলীয় প্রতিক্রিয়া নয়— বরং এটি রাজনীতিতে “নৈতিক বৈধতা বনাম জনপ্রতিনিধিত্বের” নতুন বিতর্কও উস্কে দিয়েছে।
বিএনপি ও সহিংস রাজনীতির অভিযোগ
গত এক বছরে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা, চাঁদাবাজি ও দখলবাজির অভিযোগ পুনরায় তুলে ধরে আওয়ামী লীগ তাদের ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’-এর সঙ্গে তুলনা করেছে।
এই ভাষার কূটনৈতিক তাৎপর্যও কম নয়—
কারণ এটি আন্তর্জাতিক মহলে বিএনপিকে আরও একবার ‘অস্থিতিশীলতার প্রতীক’ হিসেবে উপস্থাপন করার প্রচেষ্টা হিসেবেও দেখা যেতে পারে।
বিবৃতির শেষাংশে আওয়ামী লীগ স্পষ্ট করেছে—
“বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ হবে জনগণের রায়ের মাধ্যমে, কোনো বিদেশি প্রভাব বা অগণতান্ত্রিক চক্রান্তে নয়।”
এই বার্তা মূলত দুই স্তরে কাজ করে: একদিকে বিদেশি চাপের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী অবস্থানকে দৃঢ় করা, অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বৈধতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা।
তারেক রহমানের বক্তব্য এবং আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়া—
উভয়ই প্রমাণ করে বাংলাদেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে সংলাপ ও বোঝাপড়ার পরিসর কতটা সংকুচিত হয়েছে।
একপক্ষে আওয়ামী লীগ নিজেদের “জনকল্যাণমুখী রাজনীতি”র প্রতিনিধিত্ব করছে, অন্যদিকে বিএনপি ‘অন্যায়ের শিকার’ হিসেবে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরছে।
ফলত, এই দ্বিমুখী বয়ান দেশের রাজনীতিকে আরও মেরুকৃত করছে।
তারেক রহমানের বক্তব্যে যে “অতীতের নস্টালজিয়া” ফুটে উঠেছে, সেটি বাস্তব রাজনীতির চেয়ে আত্মরক্ষার মনস্তত্ত্বে বেশি প্রাসঙ্গিক।
এই বিতর্কে নতুন কিছু না থাকলেও, এর প্রতিধ্বনি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক অঙ্গনে দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
আওয়ামী লীগ তারেক রহমানের মন্তব্যকে “ষড়যন্ত্রমূলক” বললেও, বাস্তবতা হলো— রাজনীতিতে বিশ্বাসযোগ্যতার প্রশ্নে উভয় দলই জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারে কঠিন লড়াইয়ের মুখে।
জনগণ চায় উন্নয়ন, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা— কিন্তু রাজনীতি এখনও ঘুরছে অভিযোগ, প্রতিহিংসা ও বিভাজনের অক্ষ ঘিরে

 
                         
         
         
        