খুলনা কারাগারে যুবলীগ নেতা জয়নাল আবেদীন জনির হাতে-পায়ে বেড়ি পরা অবস্থায় মৃত্যু ঘিরে উঠেছে পরিকল্পিত হত্যার অভিযোগ। এই ঘটনা বাংলাদেশের কারাগার ব্যবস্থায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের গভীর সংকেত দিচ্ছে।
খুলনা জেলা কারাগারে যুবলীগ নেতা জয়নাল আবেদীন জনির মৃত্যু বাংলাদেশের মানবাধিকার বাস্তবতা ও রাষ্ট্রীয় জবাবদিহির কাঠামোকে আবারও প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয়—একজন রাজনৈতিক কর্মীর মৃত্যুর সময়ও তার হাত-পা শেকলবন্দী ছিল। এটি শুধু নিষ্ঠুরতার প্রতীক নয়, বরং কারাগার ব্যবস্থার মধ্যে লুকিয়ে থাকা অমানবিকতা ও প্রশাসনিক ঔদাসীন্যের নগ্ন চিত্র।
পরিবার ও সহকর্মীদের অভিযোগ, জনিকে একটি ষড়যন্ত্রমূলক রাজনৈতিক মামলায় আটক করে কারাগারে শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়েছিল।
যখন তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন, তখনও তার শেকল খোলা হয়নি—বরং তাকে হাসপাতালে নেওয়ার পরিবর্তে কারাগারের ভেতরেই মৃত্যুর মুখে ফেলে রাখা হয়।
এমন অভিযোগ যদি সত্য হয়, তবে এটি শুধু একটি ব্যক্তির মৃত্যু নয়—এটি একটি রাষ্ট্রীয় অপরাধের ইঙ্গিত বহন করে।
বাংলাদেশের কারাগারগুলো বহুদিন ধরেই বন্দিদের প্রতি অমানবিক আচরণ, চিকিৎসা অবহেলা, এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগে আলোচিত।
জয়নাল আবেদীনের ঘটনা সেই ধারাবাহিকতাকেই নতুন করে দৃশ্যমান করেছে।
মানবাধিকার কমিশন ও প্রশাসনের নীরবতা জনগণের আস্থার সংকটকে আরও গভীর করছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই মৃত্যুকে ‘রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড’ আখ্যা দিয়ে নাগরিক সমাজের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন—
“একজন অসুস্থ বন্দিকে শেকলবন্দী রেখে মৃত্যু ঘটানো কি কোনো সভ্য রাষ্ট্রে সম্ভব?”
এই প্রশ্নের উত্তর যেমন নৈতিক, তেমনি রাজনৈতিক।
কারণ, এমন ঘটনায় শুধু কারা কর্তৃপক্ষ নয়, পুরো প্রশাসনিক শৃঙ্খলই দায়ী হয়ে পড়ে।
যুবলীগ নেতার মৃত্যু এখন শুধু একটি রাজনৈতিক ইস্যু নয়; এটি বাংলাদেশের কারাগার ও বিচারব্যবস্থার মানবিক কাঠামোর পরীক্ষার ক্ষেত্র।
একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসন্ধান, দায়ীদের চিহ্নিতকরণ, এবং জনসমক্ষে রিপোর্ট প্রকাশ করা এখন সময়ের দাবি।
রাষ্ট্র যদি এই ঘটনায় স্বচ্ছ তদন্ত নিশ্চিত না করে, তবে তা কেবল জয়নাল আবেদীনের পরিবারের প্রতি অন্যায় হবে না,
বরং বাংলাদেশের কারাগার ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা চিরতরে হারিয়ে যাবে।
জয়নাল আবেদীনের মৃত্যু শুধুমাত্র একজন যুবলীগ নেতার মৃত্যু নয়; এটি একটি ব্যবস্থার মানবিক ব্যর্থতার প্রতীক।
এই মৃত্যু আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়—যখন ন্যায়বিচার শিকলবন্দী হয়, তখন মৃত্যু আর স্বাভাবিক থাকে না, তা রূপ নেয় পরিকল্পিত হত্যায়।
