 
                  অধ্যাপক ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে দেশের কৌশলগত বন্দর, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সেন্টমার্টিন বিদেশি শক্তির হাতে তুলে দেওয়ার গোপন চুক্তির অভিযোগে বাংলাদেশ এখন ভয়াবহ সার্বভৌমত্ব সংকটে।
বাংলাদেশ আজ এক ভয়ংকর সন্ধিক্ষণে। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যক্রম ঘিরে যে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল, তা এখন এক ভয়াবহ বাস্তবতায় রূপ নিচ্ছে। চট্টগ্রামসহ তিনটি প্রধান সমুদ্রবন্দর বিদেশি ব্যবস্থাপনায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুধু একটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নয়—এটি যেন এক গভীর ও সুপরিকল্পিত জাতীয় আত্মবিসর্জনের সূচনা। একাধিক দেশি-বিদেশি গোয়েন্দা সূত্র বলছে, অধ্যাপক ইউনূস ক্ষমতা গ্রহণের আগেই এক ‘গোপন চুক্তি’র মাধ্যমে কৌশলগত সম্পদ বিদেশি শক্তির হাতে তুলে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন।
এই চুক্তিই এখন বাস্তবায়নের পথে—প্রথম ধাপে বন্দরের নিয়ন্ত্রণ, আর পরবর্তী ধাপে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সেন্টমার্টিন দ্বীপের উপর বিদেশি প্রভাব বিস্তারের পরিকল্পনা।
এই অঙ্গীকার যদি সত্য হয়, তবে এটি নিছক রাজনৈতিক পদক্ষেপ নয়; এটি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব বিক্রির এক নজিরবিহীন অধ্যায়।
বিশ্লেষকদের মতে, বন্দর হস্তান্তরকে একটি “অর্থনৈতিক সংস্কার” হিসেবে উপস্থাপন করা হলেও এর অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য মূলত ভূরাজনৈতিক।
পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম স্পর্শকাতর সামরিক করিডর, আর সেন্টমার্টিন দ্বীপ বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সামুদ্রিক সার্বভৌমত্বের প্রতীক।
এই দুটি এলাকা বিদেশি প্রভাবের অধীনে গেলে, বাংলাদেশ কেবল ভূখণ্ড হারাবে না—হারাবে তার স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি ও প্রতিরক্ষা কাঠামোর নিয়ন্ত্রণ।
অর্থনৈতিক উন্নয়নের অজুহাতে যে গতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, তা এখন সন্দেহজনক।
টেন্ডার প্রক্রিয়া ছাড়াই বন্দরের ব্যবস্থাপনা বিদেশি হাতে দেওয়া, বন্দর এলাকায় প্রতিবাদ দমনে কঠোর অবস্থান, এবং তথ্য গোপন রাখার সরকারি প্রয়াস—
সবকিছু মিলে এই চুক্তির ‘গোপন প্রকৃতি’কে আরও স্পষ্ট করছে।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ শুরু থেকেই সতর্ক করেছিলেন, বন্দর হস্তান্তর মার্কিন ভূরাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষার অংশ হতে পারে।
এখন গোয়েন্দা সূত্রে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সেন্টমার্টিনের নাম উঠে আসায় তার সেই আশঙ্কা বাস্তবে রূপ নিচ্ছে।
সার্বভৌমত্বের সীমান্তে বাংলাদেশ
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ম্যান্ডেট ছিল নির্বাচন আয়োজন ও প্রশাসনিক স্থিতি ফিরিয়ে আনা।
অথচ তারা এখন রাষ্ট্রীয় সম্পদের নিয়ন্ত্রণ বিদেশি শক্তির হাতে তুলে দেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, যা তাদের ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করছে।
এমন সিদ্ধান্ত শুধু রাজনৈতিকভাবে নয়—আইনগতভাবেও প্রশ্নবিদ্ধ।
এটি ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে একটি “নিয়ন্ত্রিত উপনিবেশিক ব্যবস্থার” দিকে ঠেলে দিতে পারে, যেখানে জাতীয় সিদ্ধান্ত হবে বিদেশি টেবিলে।
যখন দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের বাইরে, তখন প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের স্বচ্ছতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
জনগণের অনুমোদন ছাড়া কৌশলগত সম্পদ হস্তান্তরকে অনেকেই সরাসরি “বিশ্বাসঘাতকতা” হিসেবে দেখছেন।
এখন প্রশ্ন—অধ্যাপক ইউনূসের সরকার কি সত্যিই বাংলাদেশের জন্য কাজ করছে, নাকি বিদেশি প্রভুদের ইচ্ছা পূরণের পথে?
বন্দর, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সেন্টমার্টিন—এই তিনটি অঞ্চল বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, সামরিক ও ভূরাজনৈতিক শক্তির মূল স্তম্ভ।
যদি এই স্তম্ভগুলো বিদেশি শক্তির নিয়ন্ত্রণে চলে যায়, তাহলে আমাদের সার্বভৌমত্ব কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
এখন সময় এসেছে—জনগণের জবাবদিহি দাবি করার। কারণ একটি সরকারের বিশ্বাসঘাতকতার দায় কেবল তাদের নয়, তার ফল ভোগ করবে পুরো জাতি।

 
                         
         
         
        