বাড়িভাড়া ও ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। প্রতিশ্রুতিতে নয়, এবার প্রজ্ঞাপন না পাওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা তাদের। এই আন্দোলন শিক্ষাক্ষেত্রের সংকট ও সরকারের দায়বদ্ধতার অভাবের প্রতিফলন।
১৫ অক্টোবর, দুপুর গড়িয়ে বিকেলের পথে। শাহবাগ মোড়ে জমায়েত হয়েছেন হাজারো শিক্ষক—যাদের হাতে নেই কোনো অস্ত্র, কেবল দাবি ও হতাশার ব্যানার। ‘প্রজ্ঞাপন ছাড়া ফিরব না’—এই স্লোগানে উত্তাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের এই আন্দোলন কেবল বাড়িভাড়া বা চিকিৎসা ভাতার প্রশ্ন নয়; এটি রাষ্ট্রীয় নীতি ও প্রশাসনিক প্রতিশ্রুতির বিশ্বাসযোগ্যতার পরীক্ষায় এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।
এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার মূল চালিকাশক্তি।
কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে তারা ভাতা, বেতন কাঠামো ও সুযোগ-সুবিধায় অবহেলিত।
২০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া, দেড় হাজার টাকার চিকিৎসা ভাতা এবং উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশে উন্নীত করার দাবি মোটেও অযৌক্তিক নয়—
বরং এটি ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঙ্গে ন্যূনতম সামঞ্জস্য রাখার প্রচেষ্টা।
সরকার অতীতে একাধিকবার এই দাবিগুলো নিয়ে আশ্বাস দিয়েছে, কিন্তু সেগুলো রয়ে গেছে ‘কমিটি গঠনের’ প্রতিশ্রুতির কাগজে।
ফলে শিক্ষক সমাজের মধ্যে এক গভীর ক্ষোভ জমে উঠেছে, যা আজ শাহবাগে ফুঁসে উঠেছে।
শিক্ষকদের এই অবরোধ কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়।
এটি এক পেশাজীবী শ্রেণির আর্থিক মর্যাদা রক্ষার আত্মমর্যাদার লড়াই।
প্রতিদিন নতুন আলটিমেটাম দিয়ে সাড়া না পেয়ে তারা অবশেষে শাহবাগ অবরোধের সিদ্ধান্ত নেন।
পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেওয়া তাদের প্রতিশ্রুতিহীন রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতীকী প্রতিবাদ।
এই আন্দোলনের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো—‘এবার আর প্রতিশ্রুতি নয়, প্রজ্ঞাপন চাই’।
এই বাক্যটি এখন শিক্ষকদের কণ্ঠে এক নতুন রাজনৈতিক বার্তা হয়ে উঠেছে—বিশ্বাস নয়, বাস্তব চাই; ঘোষণায় নয়, বাস্তবায়নে উত্তরদায়িত্ব চাই।
অবরোধের ফলে দেশের অনেক স্কুলে পাঠদান বন্ধ হয়ে গেছে।
প্রশাসনিকভাবে এটি এক ধরনের চাপের কৌশল হলেও, শিক্ষাব্যবস্থার ওপর এর প্রভাব গুরুতর।
দীর্ঘস্থায়ী হলে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি অনিবার্য।
তবে শিক্ষকরা বলছেন, “আমরা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করি, কিন্তু আমাদের নিজের ভবিষ্যৎও নিশ্চয়তা চায়।”
সরকারের জন্য বার্তা
প্রতিটি আন্দোলনের পেছনে থাকে এক অবহেলার ইতিহাস।
শিক্ষকদের আন্দোলনটি সরকারের জন্য এক কঠিন বার্তা—শিক্ষা খাতে প্রতিশ্রুতিগুলো যদি বাস্তবায়িত না হয়, তবে সামাজিক স্থিতিশীলতাও প্রশ্নের মুখে পড়ে।
কারণ, যে পেশাজীবীরা জাতির ভবিষ্যৎ গড়েন, তাদের হতাশা পুরো সমাজে এক ধরনের নৈরাশ্যের সঞ্চার ঘটায়।
শাহবাগে শিক্ষকদের এই অবরোধ কেবল এক দিনের প্রতিবাদ নয়, বরং রাষ্ট্রীয় প্রতিশ্রুতির বিশ্বাসযোগ্যতা পুনর্গঠনের দাবি।
তারা আর কাগজে লেখা প্রতিশ্রুতি নয়—প্রজ্ঞাপন ও বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা চান।
সরকারের উচিত দ্রুত সংলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমে এই সংকটের সমাধান করা, নইলে এটি শিক্ষা খাতের ভবিষ্যৎকে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
