আফগানিস্তান ভারতের প্রক্সি হিসেবে কাজ করছে এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সংঘাতে জড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ। কাবুলকে হুঁশিয়ারি পাকিস্তানের।
আফগানিস্তান ভারতের হয়ে কাজ করছে এবং পাকিস্তানের সঙ্গে ইচ্ছাকৃতভাবে সংঘাতে জড়িয়েছে—এমনই অভিযোগ করেছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ। বুধবার জিও নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “দিল্লির পুতুলে পরিণত হয়েছে কাবুল। অর্থায়নও সেখান থেকেই হচ্ছে।”
তিনি আরও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “আফগানিস্তান যদি সংঘাত বাড়াতে চায়, তাহলে পাকিস্তান পাল্টা জবাব দিতে পুরোপুরি প্রস্তুত। আমরা নিজেদের ভূখণ্ডে কোনো ধরনের হামলা সহ্য করবো না।”
সীমান্তে উত্তেজনা ও সংঘাতের ইতিহাস
শনিবার (১২ অক্টোবর) থেকে শুরু হওয়া সীমান্ত সংঘর্ষ রোববার সকাল পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। তারপর কিছু সময়ের জন্য ৪৮ ঘণ্টার অস্ত্রবিরতি কার্যকর হয়।
কিন্তু তা ভঙ্গ হয় বুধবার (১৫ অক্টোবর)—যেদিন বড় ধরনের সহিংসতায় জড়ায় দুই দেশ।
এই সাম্প্রতিক সংঘাতে:
- ৫৮ জন পাক সেনা নিহত হয়েছে বলে দাবি করে আফগানিস্তান
- পাকিস্তানের দাবি, তাদের হাতে ২০০ জনের বেশি তালেবান যোদ্ধা নিহত হয়েছে
সংঘাত শুরু হয়েছে মূলত সীমান্তে ডুরান্ড লাইন ঘিরে চলমান বিতর্ক ও অনুপ্রবেশজনিত অভিযোগের জেরে, যা দীর্ঘদিন ধরেই পাকিস্তান-আফগান সম্পর্ককে জটিল করে রেখেছে।
ভারতের ভূমিকায় পাকিস্তানের উদ্বেগ
পাকিস্তানের দৃষ্টিতে ভারতের কর্মকৌশল দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক ভারসাম্যকে বিপন্ন করছে।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফের বক্তব্যে ভারতের ভূমিকা নিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ পেয়েছে। তিনি বলেন:
“আফগানিস্তানকে ভারতের অর্থায়ন ও নির্দেশনায় আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে। এটা শুধু পাকিস্তানের জন্য নয়, গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তানের এই বক্তব্য চীন-ভারত-আফগানিস্তান-পাকিস্তান চতুর্বার্ষিক নিরাপত্তা চক্রকে আরও জটিল করে তুলবে।
এর ফলে সীমান্তে সংঘর্ষ ছাড়িয়ে অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস, অনুপ্রবেশ, এবং উদ্বাস্তু সংকটও ঘনীভূত হতে পারে।
আলোচনার সম্ভাবনা, তবে সতর্ক বার্তা
খাজা আসিফ স্পষ্ট করেছেন, পাকিস্তান গঠনমূলক আলোচনার পক্ষে, তবে সেজন্য শর্ত হলো সীমান্তে স্থিতিশীলতা ও সন্ত্রাসী তৎপরতা বন্ধ। তিনি বলেন:
“আমরা শান্তি চাই, কিন্তু দুর্বলতা নয়। যদি সংঘাত চাপিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে তার জবাব দিতেও আমরা প্রস্তুত।”
এই অবস্থায় আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি এখন দুই প্রতিবেশী দেশের দিকে, বিশেষ করে এমন সময়ে যখন উভয় দেশের ভেতরে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অর্থনৈতিক চাপও বাড়ছে।
আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের চলমান উত্তেজনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে ভারতের প্রসঙ্গ।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফের অভিযোগ শুধু আঞ্চলিক রাজনীতিতে নয়, বরং আন্তর্জাতিক পর্যায়েও উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে আলোচনার টেবিলে ফেরা ছাড়া আর কোনও টেকসই সমাধান দেখা যাচ্ছে না।
