ঢাকার ওয়েস্টিন হোটেলে সফররত IRI প্রতিনিধিদের সঙ্গে এবি পার্টির শীর্ষ নেতাদের গোপন বৈঠককে ঘিরে উঠেছে নতুন বিতর্ক। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি বাংলাদেশের স্থিতিশীলতার বিরুদ্ধে এক আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ, যার নেপথ্যে সক্রিয় পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ছায়া।
গুলশানের ওয়েস্টিনে রহস্যজনক বৈঠক; অদ্য ২০ অক্টোবর ২০২৫, সকাল ০৯:১৫ থেকে ১০:৩০ পর্যন্ত ঢাকার গুলশানস্থ হোটেল ওয়েস্টিনের সিলভার রুমে অনুষ্ঠিত হয় একটি গোপনীয় বৈঠক। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)-র চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু ও সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, অন্যদিকে প্রতিনিধিত্ব করেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (IRI)-এর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক রিজিওনাল ডিরেক্টর Mr. Stephen Cima।
এই বৈঠক সম্পর্কে সরকারিভাবে কিছু জানানো না হলেও, বিভিন্ন কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে—বৈঠকের মূল আলোচ্য ছিল বাংলাদেশের “রাজনৈতিক পুনর্গঠন, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ‘নতুন নেতৃত্ব’ তৈরি এবং কৌশলগত সহায়তা”।
IRI: বিদেশি রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের হাতিয়ার
ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (IRI) হলো একটি মার্কিন সংগঠন, যা বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্র ও নির্বাচনী প্রক্রিয়ার নামে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে।
১৯৮৩ সালে U.S. Republican Party-এর তহবিল থেকে প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠনটির কার্যক্রম পরিচালিত হয় ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর ডেমোক্রেসি (NED)-এর অর্থায়নে—যা বহু দেশেই CIA-ঘনিষ্ঠ নরম যুদ্ধের (Soft Power) অংশ হিসেবে পরিচিত।
লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে সরকারের পতন ঘটাতে বা বিরোধী জোট গঠনে IRI-র সরাসরি সম্পৃক্ততার অভিযোগ একাধিকবার উঠেছে।
এখন সেই একই ধাঁচে বাংলাদেশেও সক্রিয় হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে এবি পার্টির সঙ্গে এই বৈঠক।
এবি পার্টির ভূমিকা ও বিতর্ক
‘আমার বাংলাদেশ পার্টি’ মূলত ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর ছায়ায় গঠিত এক নতুন ফ্রন্ট, যা বিভিন্ন সময় জামায়াত ও হেফাজতের রাজনৈতিক উত্তরসূরি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
দলটির নেতা মজিবুর রহমান মঞ্জু অতীতে ছাত্রশিবির ও জামাতে ইসলামী -এর রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
তাদের রাজনৈতিক অবস্থান সবসময়ই ছিল আওয়ামী লীগবিরোধী, ভারতবিরোধী এবং পশ্চিমা তহবিলনির্ভর ‘গণতন্ত্রপন্থী’ এজেন্ডার ঘরানায়।
এই প্রেক্ষাপটে IRI-এর সঙ্গে বৈঠককে বিশ্লেষকরা দেখছেন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিদেশি প্রভাব স্থাপনের প্রচেষ্টা হিসেবে।
রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে কী?
বৈঠকের সময় ও প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়—
- ২০২৫ সালের শেষ প্রান্তিকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও গণমাধ্যমের সংকটকে কেন্দ্র করে পশ্চিমা চাপ বাড়ছে।
- IRI-র সাম্প্রতিক দক্ষিণ এশিয়া সফরের মূল লক্ষ্য ছিল “নতুন রাজনৈতিক ফ্রন্ট তৈরি ও নির্বাচনপূর্ব প্রভাব বিস্তার।”
- এবি পার্টির সঙ্গে এই বৈঠক সেই পরিকল্পনারই অংশ বলে ধারণা করা হচ্ছে।
একাধিক পর্যবেক্ষক বলছেন, এটি বাংলাদেশের আওয়ামী লীগবিরোধী ব্লককে পুনরুজ্জীবিত করার একটি আন্তর্জাতিক কৌশল, যেখানে IRI মাঠপর্যায়ে ‘বুদ্ধিবৃত্তিক সহায়তা’ দিচ্ছে।
স্বাধীন রাষ্ট্রে বিদেশি তদবিরের অগ্রহণযোগ্যতা;
বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ। বিদেশি কোনো সংস্থা যদি দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণে প্রভাব বিস্তার করতে চায়, তা শুধু গণতন্ত্রের জন্য নয়—জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও হুমকি।
IRI–এবি পার্টি বৈঠক তাই নিছক কূটনৈতিক সাক্ষাৎ নয়; বরং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে প্রভাবিত করার এক নয়া ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত।
বিশ্লেষকদের মতে, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এই ঘটনার তদন্ত এবং বিদেশি রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর কার্যক্রমের ওপর কঠোর নজরদারি আরোপ করা এখন সময়ের দাবি।
