মায়ানমারের কারেন স্টেটে বিদ্রোহী গোষ্ঠী KNDF সামরিক ঘাঁটি দখলের অভিযানে অগ্রসর হয়েছে। তারা এখন প্রায় ৯০% এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। বর্ষা শেষে আবারও পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধ শুরু হয়েছে দেশজুড়ে।
কারেন্নি বাহিনীর অগ্রযাত্রা: নতুন করে জ্বলে উঠছে মায়ানমারের যুদ্ধ! দীর্ঘ কয়েক মাসের স্থবিরতার পর আবারও দাউ দাউ করে জ্বলে উঠেছে মায়ানমারের গৃহযুদ্ধ। কারেন স্টেটের পর্বত ও জঙ্গলে কারেন্নি ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্স (KNDF) নতুন করে আক্রমণ শুরু করেছে মায়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। তাদের সর্বশেষ অভিযানে একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি ঘেরাও ও দখল করতে দেখা গেছে KNDF সদস্যদের।
এই আক্রমণের মাধ্যমে KNDF এখন কারেন স্টেটের প্রায় ৯০% এলাকা সরকারের হাত থেকে মুক্ত করেছে বলে দাবি করছে।
এটি মায়ানমারের সামরিক জান্তার জন্য এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় আঘাত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
মৌসুমি যুদ্ধ: কেন সেপ্টেম্বরেই সংঘাত তীব্র হয়
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভূগোল যুদ্ধকে মৌসুমি চক্রের মধ্যে বেঁধে রাখে। বর্ষা মৌসুমে নদী-খাল উপচে পড়ে, পাহাড়ি পথ অচল হয়ে যায়—যুদ্ধ পরিচালনা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ে।
তাই মায়ানমারের সকল পক্ষই বর্ষা মৌসুমে এক ধরনের অঘোষিত যুদ্ধবিরতি পালন করে।
কিন্তু সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে যখন শুকনো মৌসুম শুরু হয়, তখনই ফের শুরু হয় পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ। এ বছরও ব্যতিক্রম ঘটেনি।
বহুমুখী ফ্রন্ট: KNDF ছাড়াও সক্রিয় অন্যান্য গোষ্ঠী
কারেন স্টেটের KNDF ছাড়াও দেশটির অন্য প্রদেশগুলোতেও বিদ্রোহের আগুন জ্বলছে।
- আরাকান স্টেট: এখানে আরাকান আর্মি (AA) সরকারি বাহিনীর সঙ্গে তীব্র সংঘাতে লিপ্ত।
- শান স্টেট: শান স্টেট আর্মি (SSA) আবারও সক্রিয় হয়েছে সীমান্ত এলাকায়।
- চিন ও কাচিন প্রদেশেও স্থানীয় মিলিশিয়ারা সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালাচ্ছে।
এইভাবে বিভিন্ন জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী একযোগে সরকারের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করায় সেনাবাহিনী কার্যত বহুমুখী ফ্রন্টে ছড়িয়ে পড়েছে, যা তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করছে।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষণ: গৃহযুদ্ধ আরও জটিল হতে পারে
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, মায়ানমারের সামরিক জান্তা এখন এক সঙ্কটজনক অবস্থানে।
চীন, ভারত ও থাইল্যান্ড সীমান্তের নিকটবর্তী এলাকায় চলমান যুদ্ধ আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্যও হুমকি তৈরি করছে।
এদিকে, KNDF ও অন্যান্য গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে অস্থায়ী সমন্বয় তৈরি হলেও, রাজনৈতিক ঐক্যের অভাব ভবিষ্যতে নতুন জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
মায়ানমারের যুদ্ধ এখন আর কেবল এক দেশের অভ্যন্তরীণ সঙ্কট নয়; এটি দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও মানবিক পরিস্থিতিকেও সরাসরি প্রভাবিত করছে।
KNDF-এর অগ্রযাত্রা মায়ানমার সেনাবাহিনীর একক আধিপত্যের অবসান ঘটাতে পারে—তবে এর মূল্য হতে পারে দীর্ঘমেয়াদি রক্তক্ষয়ী সংঘাত ও অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ।
