মিরপুরে দিনে-দুপুরে সংঘটিত ১০০ ভরি স্বর্ণ ও ৩২ লাখ টাকা লুটের ঘটনা নগরজীবনের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর প্রশ্ন তুলেছে। পুলিশের তৎপরতা সত্ত্বেও রাজধানীতে বেড়ে চলেছে পরিকল্পিত ডাকাতি ও লুটের ঘটনা।
রাজধানীর বুকে এমন দৃশ্য কল্পনা করাও কঠিন—দিনের আলোয়, জনবহুল মিরপুর মাজার রোড এলাকায়, এক পার্টস ব্যবসায়ীর বাসায় ঢুকে সংঘবদ্ধ ডাকাত দল ১০০ ভরি স্বর্ণ ও ৩২ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে গেলো। সময়টা সকাল ১১টা, যখন পুরো এলাকা ছিল সচল, আশেপাশে চলছিল নিত্যদিনের কর্মব্যস্ততা।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, মুখোশ পরা তিন যুবক পরিকল্পিতভাবে প্রবেশ করে গৃহকর্ত্রীকে বেঁধে ফেলে, অস্ত্রের মুখে আলমারি ভেঙে নেয় স্বর্ণ ও নগদ অর্থ।
মাত্র পনেরো মিনিটের মধ্যে তারা সবকিছু শেষ করে ব্যাগ হাতে বেরিয়ে যায়।
এ দৃশ্য শুধু একটি পরিবারের ক্ষতির প্রতিচ্ছবি নয়, বরং নগর নিরাপত্তা ব্যবস্থার ভাঙা আয়নার প্রতিফলন।
দারুস সালাম থানার ওসি রকিব উল হোসেন জানিয়েছেন, পুলিশ প্রাথমিকভাবে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করছে এবং অপরাধীদের শনাক্তে কাজ চলছে।
তবে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ইঙ্গিত দেয়, রাজধানীতে সংগঠিত অপরাধ চক্রগুলো নতুন কৌশলে সক্রিয় হয়েছে।
এ ঘটনার ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ—এলাকার ইন্টারনেট কোম্পানির কর্মচারীর সম্পৃক্ততা থাকতে পারে।
যদি এই অভিযোগ সত্য হয়, তাহলে এটি আরেকটি উদাহরণ যে কীভাবে ‘ইনসাইডার ইনফরমেশন’ ব্যবহার করে ডাকাতি পরিকল্পিত হয়।
ঢাকা শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ক্রমেই ভঙ্গুর হয়ে পড়ছে।
সিসিটিভি ও নিরাপত্তা ক্যামেরা থাকলেও বাস্তবে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা সীমিত।
অধিকাংশ আবাসিক এলাকার নিরাপত্তাকর্মীরা প্রশিক্ষণহীন; পুলিশের টহল সীমিত, আর নাগরিক সচেতনতা প্রায় অনুপস্থিত।
বিশ্লেষকদের মতে, “দিনের বেলায় এমন ডাকাতি ঘটানো মানেই অপরাধীরা নিশ্চিত ছিল যে তারা ধরা পড়বে না।”
এই নিশ্চয়তা শুধু অপরাধীদের নয়—ব্যবস্থার দুর্বলতারও নিদর্শন।
প্রযুক্তি নির্ভর অপরাধ ও পুলিশের চ্যালেঞ্জ
ডিজিটাল নজরদারি যুগে অপরাধ দমন যেমন সহজ হয়েছে, তেমনি অপরাধ সংঘটনও হয়েছে প্রযুক্তিনির্ভর।
সিসিটিভি ফুটেজ প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও বাস্তবে অনেক সময় মানসম্মত ভিডিও না থাকায় অপরাধী শনাক্তে সময় লাগে।
অপরদিকে, সংগঠিত অপরাধীরা এখন ‘ডিজিটাল ছায়া’ রেখে কাজ করে—যেমন নকল নম্বরপ্লেট, ভুয়া মোবাইল সিগন্যাল, বা রেকর্ড করা কলিংবেল সাউন্ড ইত্যাদি ব্যবহার করে।
এই ঘটনাটি রাজধানীবাসীর মধ্যে গভীর আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, একের পর এক এমন ডাকাতি আইনের শাসন ও পুলিশ প্রশাসনের ওপর জনআস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচিত দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা, এবং একইসঙ্গে নগর নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ডিজিটালভাবে পুনর্গঠন করা।
মিরপুরের এই দিনে-দুপুরে সংঘটিত লুটের ঘটনা শুধু একটি অপরাধ নয়, বরং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রতি নাগরিক আস্থার পরীক্ষা।
যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে রাজধানী ঢাকাকে নিরাপদ নগরীর পরিবর্তে “অপরাধপ্রবণ নগরী” হিসেবে চিহ্নিত করতে সময় লাগবে না।
