বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সব ইউনিট বন্ধ হয়ে পড়ায় উত্তরাঞ্চলে বিদ্যুৎ সংকট চরমে। কয়লা সরবরাহ ও প্রশাসনিক অদক্ষতা কি এই অচলাবস্থার মূল কারণ?
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের প্রধান বিদ্যুৎ উৎস বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র একযোগে সব ইউনিট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও লালমনিরহাটসহ পুরো উত্তরাঞ্চল বিদ্যুৎ সংকটে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। কয়লার ঘাটতি ও যান্ত্রিক ত্রুটি এই বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হলেও, এর পেছনে রয়েছে আরও গভীর এক প্রশাসনিক ও নীতিগত ব্যর্থতার শিকড়।
বড়পুকুরিয়ার কয়লা খনি ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সম্পর্ক সবসময়ই জটিল।
স্থানীয় খনি ব্যবস্থাপনার অদক্ষতা, পরিবহন সমস্যা, এবং আমদানিজনিত বিলম্ব এই সংকটের পেছনে দায়ী হলেও, বড় প্রশ্ন হচ্ছে—
কেন কয়লার বিকল্প সরবরাহ বা রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা আগেভাগে নিশ্চিত করা হয়নি?
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কেন্দ্রটি চালু রাখতে পর্যাপ্ত কয়লা মজুত নেই।
অথচ দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের কারণে কয়লা আমদানিতেও দেখা দিয়েছে স্থবিরতা।
এই অবস্থায় কেন্দ্রটি কার্যত ‘নীতিগত অবহেলার বলি’।
তিনটি ইউনিটের সম্মিলিত উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৫২৫ মেগাওয়াট।
এই পরিমাণ বিদ্যুৎ উত্তরাঞ্চলের শিল্প ও কৃষি উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ার পরেও সময়মতো রক্ষণাবেক্ষণ না করায় একে একে সব ইউনিট বন্ধ হয়ে গেছে।
ফলে শিল্পাঞ্চলগুলোতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে এবং সাধারণ মানুষের জীবনে নেমে এসেছে লোডশেডিংয়ের অন্ধকার।
বড়পুকুরিয়া সংকট শুধু উত্তরাঞ্চলের সমস্যা নয়; এটি এখন পুরো দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার ওপর প্রশ্ন তুলেছে।
সরকার দাবি করছে, বিকল্প উৎস থেকে সরবরাহ জোরদার করা হচ্ছে, কিন্তু বাস্তবে গ্রিডে ঘাটতির চাপ বাড়ছে।
এই পরিস্থিতি ইঙ্গিত দেয়—দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ কাঠামো এখনো অতিমাত্রায় কেন্দ্রনির্ভর এবং ঝুঁকিপূর্ণ।
অস্থায়ী সমাধান নয়, কাঠামোগত সংস্কার দরকার
অন্তর্বর্তী সরকার জানিয়েছে, কয়লা সরবরাহ পুনরায় শুরু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
কিন্তু এটি সাময়িক ব্যবস্থা মাত্র।
মূল প্রয়োজন হলো জ্বালানি নীতির পুনর্বিন্যাস, যেখানে স্থানীয় সম্পদ ব্যবস্থাপনা, আমদানি নির্ভরতা হ্রাস, ও বিকল্প জ্বালানি উৎসের উন্নয়ন সমন্বিতভাবে করা হবে।
বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বন্ধ হয়ে যাওয়া কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়; এটি দেশের জ্বালানি ব্যবস্থার কাঠামোগত দুর্বলতার প্রতিফলন।
সময় এসেছে শুধু কয়লা সরবরাহ নয়, বরং পুরো বিদ্যুৎ নীতির পুনর্বিবেচনার।
নতুবা এই ধরনের সংকট আবারও ফিরে আসবে—আর সেই অন্ধকারে হারিয়ে যাবে শিল্পোন্নয়ন, কৃষি উৎপাদন এবং সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবন।
