চট্টগ্রামের সাগরতীরে রগ কাটা অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় উঠে আসছে রহস্যের ঘনঘটা।তদন্তে নতুন কোন ক্লু পাচ্ছে পুলিশ?
চট্টগ্রামের বন্দর থানার আনন্দবাজার আউটার রিংরোডসংলগ্ন সাগরতীরে কাশবনের ভেতর থেকে রোববার রাতে উদ্ধার হওয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী শামীম মকসুদ খান জয়-এর মৃত্যু এখন পুরো শহরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। দুই হাত ও দুই পায়ের রগ কাটা অবস্থায় তাঁর লাশ উদ্ধার হওয়ার পর থেকেই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে—এটি কি আত্মহত্যা, নাকি একটি পরিকল্পিত খুন?
পুলিশের বর্ণনা অনুযায়ী, স্থানীয় কয়েকজন প্রথমে কাশবনের ভেতরে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন জয়কে।
টহলরত পুলিশ সদস্যরা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত জয় (২৬) ঢাকার আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি–বাংলাদেশ (এআইইউবি) থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন।
বরিশাল জেলার ছেলে হলেও তিনি চট্টগ্রামের বন্দর আবাসিকে পরিবারের সঙ্গে বসবাস করতেন।
পরিবারের বরাতে পুলিশ জানায়, দুপুরে জয় একটি ফোন কল পাওয়ার পর বাসা থেকে বের হন চাকরির ইন্টারভিউ দিতে।
তবে কৌতূহলজনকভাবে তিনি নিজের মোবাইল ফোনটি বাসায় রেখেই বেরিয়েছিলেন।
পুলিশ বলছে, এটি তদন্তের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র।
কেন তিনি ফোন রেখে গিয়েছিলেন? যদি সত্যিই ইন্টারভিউ দিতে যেতেন, তবে মোবাইল না নেওয়ার যৌক্তিক কারণ কী?
পুলিশের প্রাথমিক ধারণায়, দুইটি সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না—একটি আত্মহত্যা, অন্যটি হত্যা।
কিন্তু দুই হাত ও দুই পায়ের রগ কাটা অবস্থায় কাউকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেলে সাধারণত আত্মহত্যার ধারণাটি দুর্বল হয়ে পড়ে।
অন্যদিকে, ঘটনাস্থলটি শহর থেকে কিছুটা দূরে, নির্জন এলাকা—যা পরিকল্পিতভাবে কাউকে সেখানে নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাকে উস্কে দেয়।
প্রযুক্তিগত সূত্র খোঁজে তদন্ত
বন্দর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জাকির হোসেন জানিয়েছেন, ঘটনার ক্লু এখনো মিলেনি।
তবে পুলিশ প্রযুক্তিগত দিক থেকেও অনুসন্ধান চালাচ্ছে—জয়ের সর্বশেষ অবস্থান, যাদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল, এমনকি পরিবারের কাছ থেকে পাওয়া মুঠোফোনের ডেটা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার মাহমুদুল হাসান বলেন, “আমরা তিনটি বিষয় সামনে রেখে তদন্ত করছি—আত্মহত্যা, খুন, বা ছিনতাই।
তবে এটি নিছক কোনো দুর্ঘটনা নয়।”
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা বা রহস্যজনক মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে চলেছে।
চাকরি সংকট, মানসিক চাপ, সম্পর্কের টানাপোড়েন, কিংবা ডিজিটাল যুগের একাকীত্ব—সবকিছু মিলিয়ে তরুণরা অদৃশ্য এক মানসিক যুদ্ধে লিপ্ত।
তবে শামীম মকসুদ খানের মৃত্যু যদি সত্যিই আত্মহত্যা হয়, তবে তা তরুণ প্রজন্মের হতাশা ও সমাজের মানসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্বলতার আরেকটি করুণ উদাহরণ।
আর যদি এটি খুন হয়, তবে তা দেশের শহুরে নিরাপত্তা ব্যবস্থার ভয়াবহ ব্যর্থতা নির্দেশ করবে।
নিহতের পরিবার এখনো নিশ্চিত নয়—তাঁর মৃত্যু আত্মহত্যা না খুন। তারা মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এদিকে, চট্টগ্রামের বাসিন্দারা সামাজিক মাধ্যমে ঘটনাটির দ্রুত ও স্বচ্ছ তদন্তের দাবি জানাচ্ছেন।
শামীম মকসুদ খানের মৃত্যু কেবল একটি ব্যক্তি-দুর্ভাগ্যের গল্প নয়; এটি এক অদৃশ্য সামাজিক সংকটের প্রতিচ্ছবি।
তরুণদের জীবনসংগ্রাম, নিরাপত্তা ও মানসিক সুস্থতার প্রশ্নে এই মৃত্যু যেন একটি সতর্ক বার্তা হয়ে ওঠে—আমাদের সমাজে ‘রগ কাটা’ বাস্তবতা আর নিছক শিরোনাম নয়, বরং গভীরতর সংকটের প্রতিচ্ছবি।
