 
                  গণভবন ও থানার বিশাল অস্ত্রগুলোর বিচিত্র ঘটনায় উঠছে প্রশ্ন — বিএনসিসির মাধ্যমে পরিচালিত যুব প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে প্রথম দফায় নেয়া ৮,০০০ জন কাদের? নির্বাচন, নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতার প্রশ্ন নিয়ে বিশ্লেষণী প্রতিবেদন।
সাম্প্রতিক সময়ে গণভবন ও বিভিন্ন থানা থেকে লুট হওয়া ভারী অস্ত্র সরবরাহ সংক্রান্ত তথ্য-আলোচনার প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রীয় বা আধা-রাষ্ট্রীয় কোনো বাহিনী যুব প্রশিক্ষণে নাম নিয়েছে—বক্তব্যগুলো অনুযায়ী বিএনসিসি (BNCC) নামে একটি কর্মসূচির আওতায় মোট ৪০ হাজার তরুণকে প্রশিক্ষণে নেওয়া হবে; প্রথম ধাপে পাঠানো হয়েছে প্রায় ৮,০০০ জন। এই উদ্যোগের ঘোষণা দেশের সাইবার-অবধি ও সামাজিক-রাজনৈতিক আলোচনায় দ্রুত সাড়া ফেলেছে।
কেন উদ্বেগ সতর্ক হওয়া প্রয়োজন?
১) বাছাই-ক্রিয়ারopacity (অস্বচ্ছতা)
প্রশিক্ষণে বাছাই কিরূপে হয়েছে—কোন মানদণ্ড, কোন কমিটি, রাজনৈতিক পরিচিতি, জাতীয় পরিচয়, কি কোনো নিরাপত্তা যাচাই হয়েছে—এসব প্রশ্ন অনেকে করছেন। 
সরকারি পরিষ্কার ব্যাখ্যা না থাকায় সন্দেহ বাড়ছে।
২) প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিশৃঙ্খলা
“নাগরিক প্রস্তুতি” বা “বৈধ সিভিল প্রতিরক্ষা” প্রশিক্ষণ হতে পারে—কিন্তু যদি একই চ্যানেলে অস্ত্রচালনা, কম্যান্ডো কৌশল বা সংঘটিত অপারেশনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, তা বেশি জটিল ও বিপজ্জনক হবে।
৩) সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা, অসহিষ্ণুতা ও ভুয়া খবরের মধ্যে এধরনের প্রশিক্ষণ গণতান্ত্রিক বিবাদকে প্রজ্জ্বলিত করতে পারে।
জনগণের আস্থা বিস্তারের বদলে বিভাজন সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা আছে।
- অস্ত্র এবং লজিস্টিক-ফেসিলিটি
 গণভবন ও থানার অস্ত্র-নিহিত ঘটনার পরই বড় মাত্রায় যুবশক্তিকে প্রশিক্ষণের জন্য তোলা হলে এর সম্ভাব্য ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।
সরকার কি বলছে — এখনই জানা প্রয়োজন
প্রশাসনিক বিবরণে জানতে চাওয়া উচিত:
- প্রশিক্ষণের মডিউল ও কারিকুলাম কী? (প্রথমিক-দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, সিভিল ডিফেন্স নাকি অস্ত্রচালনা? )
- বাছাই ও যাচাই প্রক্রিয়া (পেছনে কোনো নিরাপত্তা ভেট আছে কি?)
- প্রশিক্ষণের তহবিল ও অনুদান উৎস কোথা থেকে?
- ট্রেনাররা কে এবং তাদের যোগ্যতার স্বচ্ছ স্বরূপ?
- প্রশিক্ষণের পর যে প্রত্যয়ন/সনদ দেওয়া হবে তার আইনগত মান কি?
সম্ভাব্য প্রস্তাবনা (Policy recommendations)
১. সরকারি স্বচ্ছতা: প্রশিক্ষণ কারিকুলাম ও তালিকা দ্রুত প্রকাশ করতে হবে।
২. স্বাধীন নজরদারি: নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে সংসদীয় কমিটি বা সিভিল সোসাইটি পর্যবেক্ষণ নিতে পারে।
৩. লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক: কোন প্রশিক্ষণ কোন আইনগত সীমায় হতে পারে তা স্পষ্ট করে আইনশৃঙ্খলা ব্যুরো নিশ্চিত করুক।
৪. কমিউনিটি আউটরিচ: স্থানীয় ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও সিভিক লিডারদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে উদ্বেগ দূরীকরণ জরুরি।
শেষ কথা
নাগরিক প্রস্তুতি ও স্বেচ্ছাসেবামূলক প্রশিক্ষণ ইতিবাচক উদ্যোগ হলেও, যদি তা অস্পষ্ট মানদণ্ডে, লুকানো উদ্দেশ্য বা অস্ত্র সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ-সেশন হিসেবে চালু থাকে, তা জাতীয় নিরাপত্তা ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাই সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত জানানো উচিত—এই কর্মসূচির প্রকৃতি, পরিধি ও নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা, যাতে জনগণের সন্দেহ কেটে যায় এবং বাস্তব প্রয়োজনে প্রশিক্ষণ সত্যিই গণকল্যাণমুখী হয়।

 
                         
         
         
        