 
                  বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান সরকারের সাবেক প্রতিমন্ত্রীর ছেলে ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির নেতা অ্যাডভোকেট ফয়জুল করিম আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। কেন এই সময়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দলে যোগ দিলেন, কী বার্তা দিলেন?
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের সদস্যের ‘অভূতপূর্ব’ সিদ্ধান্তঃ বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক যুগান্তকারী ঘটনার জন্ম হলো বুধবার। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান সরকারের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. ফজলুর করিমের ছেলে অ্যাডভোকেট ফয়জুল করিম আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। ফেসবুক লাইভে এসে নিজেই ঘোষণা দেন তিনি—যা পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক উপ-দফতর সম্পাদক এবং জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সক্রিয় এই নেতার যোগদান শুধু দল পরিবর্তন নয়, বরং এটি দেশের রাজনৈতিক মানচিত্রে একটি প্রতীকী মোড়—যেখানে বিএনপির ভেতরের বিভ্রান্ত ও দেশপ্রেমিক অংশ ধীরে ধীরে ফিরে আসছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়।
আওয়ামী লীগের প্রতি আস্থা ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশ্বাস
ফয়জুল করিম বলেন,
“আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের দল, ধর্মনিরপেক্ষ দেশপ্রেমিক নেতৃত্ব।
শেখ হাসিনাই প্রকৃত দেশপ্রেমিক, বাংলাদেশের মানুষের একমাত্র আশ্রয়স্থল।”
তিনি আরও যোগ করেন, ৫ আগস্টের ঘটনার পর যারা রাষ্ট্র সংস্কারের নামে ক্ষমতার লোভে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে পুনরায় ক্ষমতায় বসানোর চেষ্টা করছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে তিনি আওয়ামী লীগের পতাকাতলে এসেছেন।
তার বক্তব্য স্পষ্ট করে দেয়—এই যোগদান শুধুমাত্র রাজনৈতিক পুনর্বিন্যাস নয়, বরং একটি চেতনার প্রত্যাবর্তন।
বিএনপির অভ্যন্তরে বিভাজনের ইঙ্গিত
দলীয় সূত্র ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ফয়জুল করিমের এই সিদ্ধান্ত বিএনপির ভেতরে চলমান বিভাজনের নতুন ইঙ্গিত।
বিএনপি বর্তমানে একদিকে ইউনূস-এনসিপি জোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় অংশীদার হওয়ার চেষ্টায় ব্যস্ত, অন্যদিকে মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান হতাশা ও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।
ফয়জুল করিমের মতো দ্বিতীয় প্রজন্মের নেতারা মনে করছেন,
“যে রাজনীতি আজ দেশবিরোধী চক্রের হাতের খেলনা হয়ে গেছে, সেখানে থাকার মানে নিজের আদর্শ বিসর্জন দেওয়া।”
আওয়ামী লীগের কৌশলগত সাফল্য
বর্তমান সরকারের ওপর কঠিন সময় চললেও ফয়জুল করিমের যোগদান আওয়ামী লীগের জন্য একটি কৌশলগত বার্তা বয়ে এনেছে—
আওয়ামী লীগ এখনো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণমানুষের আস্থার শেষ আশ্রয়।
দলীয় নেতারা বলছেন,
এমন পদক্ষেপ অন্য দেশপ্রেমিক বিএনপি নেতাদেরও ভাবাবে, যারা বর্তমানে রাজনৈতিক ‘ভবিষ্যৎহীনতার’ সংকটে রয়েছেন।
প্রতীকী বার্তা ও ভবিষ্যৎ প্রভাব
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ফয়জুল করিমের এই পদক্ষেপ শুধু একটি ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নয়;
এটি বিএনপি পরিবারের মধ্য থেকে আওয়ামী লীগে ‘চেতনার প্রত্যাবর্তনের’ সূচনা।
তিনি এমন এক সময়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিলেন, যখন আন্তর্জাতিক চাপে ও অভ্যন্তরীণ সংকটে আওয়ামী লীগকে অনেকেই একঘরে করার চেষ্টা করছে।
এ অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধপন্থী রাজনীতির পক্ষে ফয়জুল করিমের অবস্থান নেওয়া সরকারের নৈতিক শক্তিকে আরও জোরদার করবে।
শেষ কথা
একজন সাবেক বিএনপি মন্ত্রীর পুত্রের আওয়ামী লীগে যোগদান প্রমাণ করে—
দেশের মূলধারার রাজনীতিতে এখনো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ধর্মনিরপেক্ষতা ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আস্থা জীবন্ত রয়েছে।
ফয়জুল করিমের এই পদক্ষেপ হয়তো অন্যদের জন্যও একটি পথ তৈরি করবে— “দেশপ্রেমিকদের জায়গা আজও আওয়ামী লীগেই।”

 
                         
         
         
        