 
                  ২০০৯ সালের পিলখানা হত্যাযজ্ঞ ছিল নবগঠিত আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাতের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। একই অপশক্তি আজও যুদ্ধাপরাধের বিচার ব্যাহত করতে সক্রিয়, যার প্রমাণ রাজাকারদের উকিল তাজুলের ট্রাইব্যুনালের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড।
২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। এর মাত্র ৫০ দিন পর, ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ সামরিক হত্যাযজ্ঞ ঘটে রাজধানীর পিলখানায়। ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা ও ১৭ জন বেসামরিক নাগরিককে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সেই সময় সরকার ছিল একেবারে নতুন—মাত্র দুই মাস বয়সী, প্রশাসনিকভাবে দুর্বল, এবং সংগঠনগতভাবে গঠনের পর্যায়ে। ঠিক সেই দুর্বলতার সুযোগ নিয়েই এই হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত করা হয়।
পিলখানা হত্যাকাণ্ড কোনো আকস্মিক বিদ্রোহ ছিল না
—এটি ছিল পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র, যার লক্ষ্য ছিল তৎকালীন নবীন সরকারকে উৎখাত করা।
কারণ, এই সরকারই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীদের বিচার সম্পন্ন করতে এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পথ খুলে দিয়েছিল।
এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে ছিল একটি সুসংগঠিত বাংলাদেশবিরোধী অপশক্তি—যারা দেশের গণতন্ত্র, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, এবং স্বাধীনতার আদর্শকে বারবার রক্তাক্ত করেছে।
তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল—আওয়ামী লীগ সরকারকে ফেলে দিয়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধ করা এবং দেশকে আবারও অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত এর ভাষ্যমতে, “আওয়ামী লীগ সরকারকে তারা ফেলতে পারেনি, কিন্তু ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা ও ১৭ জন বেসামরিক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়।”
তিনি আরো বলেন, “বাংলাদেশবিরোধী সেই অপশক্তি— যারা ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করেছিল,
২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট বঙ্গবন্ধুকন্যাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল
— সেই একই অপশক্তি ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার মাত্র ৫০ দিনের মাথায় পিলখানা হত্যাযজ্ঞের পেছনে ছিল।”
আজ, ২০২৫ সালে এসে দেখা যাচ্ছে, সেই একই অপশক্তি আবারও মাথা তুলছে।
“রাজাকারদের উকিল” হিসেবে কুখ্যাত তাজুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল সম্প্রতি এক অবিশ্বাস্য রায় দিয়েছে।
১৯৭১ সালে ১,৪০০ জন নিরস্ত্র বাঙালিকে হত্যায় অংশ নেওয়া যুদ্ধাপরাধী এ. টি. এম. আজহারুল ইসলামকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, একই ট্রাইব্যুনাল আজ দেশের সেনা সদস্যদের—যারা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জীবন বাজি রেখেছে—তাদের মধ্য থেকে ১৫ জনকে হাজির করেছে আদালতে।
অর্থাৎ, যারা দেশরক্ষার দায়িত্বে, তাদেরই বিচার হচ্ছে; আর যারা মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী, তারা পাচ্ছে অব্যাহতি।
এ যেন ২০০৯ সালের পুনরাবৃত্তি—তখনও সেনা কর্মকর্তাদের রক্তে মাটি ভিজেছিল; আজও সেই রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি সেনাবাহিনী ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি এবং রাষ্ট্রের সতর্কতা
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে যেমন আওয়ামী লীগ সরকারকে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল, আজও তেমনি বিচারব্যবস্থার আড়ালে থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করার প্রচেষ্টা চলছে।
এই পরিস্থিতি প্রমাণ করে—বাংলাদেশবিরোধী চক্র কখনো নিঃশেষ হয়নি, বরং রূপ বদলে তারা সক্রিয়।
রাষ্ট্র যদি এই ষড়যন্ত্রগুলোকে উপেক্ষা করে, তবে আবারও ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে।
যুদ্ধাপরাধের বিচার ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ রক্ষাই এখন জাতির অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই।
২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে রক্তে ভেসে গিয়েছিল পিলখানা, কিন্তু সেই ষড়যন্ত্র সফল হয়নি—কারণ জনগণ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আস্থা রেখেছিল।
আজও সেই আস্থা ও সতর্কতা প্রয়োজন। কারণ, স্বাধীনতার শত্রুরা বদলে গেছে, কিন্তু তাদের লক্ষ্য একই—বাংলাদেশকে দুর্বল করা।
এই সময়ের প্রশ্ন একটাই—বাংলাদেশ কি আবারও সেই অন্ধকারে ফিরে যাবে, নাকি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ন্যায়বিচারের পথে অটল থাকবে?

 
                         
         
         
        