সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনই বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার একমাত্র সমাধান; ইউনূস সরকারের পদক্ষেপ বিপজ্জনক।
অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন ছাড়া স্থিতিশীলতা অসম্ভব
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অচলাবস্থা থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হলো অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন, বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র ও উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, বর্তমান ড. ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার যদি সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত না করে, তবে দেশ দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার দিকে যাবে।
জয়ের ভাষায়, “এই নিষেধাজ্ঞা (আওয়ামী লীগের ওপর) অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। নির্বাচন হতে হবে অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও সুষ্ঠু।”
“বিচারের আড়ালে রাজনৈতিক প্রতিশোধ”
সজীব জয় অভিযোগ করেছেন, সরকার শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত বিচার প্রক্রিয়া ব্যবহার করছে।
তিনি বলেন, “এখন যা ঘটছে, তা বিচার নয়; বরং রাজনৈতিক প্রতিশোধ। আমার মা এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বকে নির্বাচনী প্রতিযোগিতা থেকে দূরে রাখতে এই নাটক সাজানো হয়েছে।”
এর মাধ্যমে তিনি সরাসরি ইঙ্গিত দেন যে, ইউনূস সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে বাদ দিয়ে একদলীয় শাসন কায়েম করা।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ, ইসলামপন্থিদের উত্থান
গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
দলটির অর্ধশতাধিক নেতা ও সাবেক মন্ত্রী গ্রেপ্তার হন, অনেকে আত্মগোপনে যান বা দেশ ছাড়েন।
জয় সতর্ক করে বলেন, “বাংলাদেশ অস্থিতিশীল থাকলে ইসলামপন্থিরাই লাভবান হবে।”
তিনি অভিযোগ করেন,
“ইউনূস সরকার পরোক্ষভাবে জামায়াতে ইসলামী ও অন্যান্য কট্টর ইসলামি সংগঠনকে পুনরায় রাজনীতিতে সক্রিয় হতে দিচ্ছে, যা দেশের ধর্মনিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতার চেতনাকে হুমকির মুখে ফেলছে।”
মানবাধিকার লঙ্ঘন ও সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ
সজীব ওয়াজেদ জয় ইউনূস সরকারের মানবাধিকার রেকর্ডকে “ভয়াবহ” বলে আখ্যা দেন।
তার দাবি, গত এক বছরে প্রায় ৫০০ আওয়ামী লীগ কর্মীকে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়েছে, এবং ৩১ জন কারাগারে নির্যাতনে মারা গেছেন।
তিনি বলেন, “সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, বিশেষ করে হিন্দুরা এখন সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত।
রাষ্ট্রীয় বাহিনীর অংশগ্রহণে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু সরকার নিরব।”
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা “ক্যাঙ্গারু কোর্ট”
সজীব জয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চলমান মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাকে ‘রাজনৈতিক উইচ-হান্ট’ বা প্রতিশোধমূলক বিচার হিসেবে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, “একটি তথাকথিত ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড দাবি করেছে।
কিন্তু এটি কোনো বৈধ আদালত নয়, এটি এক ধরনের ‘ক্যাঙ্গারু কোর্ট’। বিচার নয়, এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা।”
জয় মনে করেন, এই ধরনের মিথ্যা বিচার আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে এবং রাজনৈতিক সমাধানের পথ আরও জটিল করে তুলছে।
নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ
এপি’র প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের ৫২টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে বর্তমানে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ থাকায় নির্বাচনের বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।
জয় বলেন, “যদি আওয়ামী লীগকে নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য সময় না দেওয়া হয়, তাহলে জনগণ বা আন্তর্জাতিক মহল কেউই সেই নির্বাচনকে বৈধ মনে করবে না। এটি হবে এক প্রহসন।”
সজীব ওয়াজেদ জয়ের বক্তব্য বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন বাস্তবতার ইঙ্গিত দেয়।
তিনি স্পষ্ট করেছেন— অন্তর্ভুক্তিমূলক, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ছাড়া দেশে স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়।
তার এই আহ্বান কেবল আওয়ামী লীগ নয়, বরং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গণতন্ত্র ও উন্নয়নের টেকসই ভিত্তির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা।
