 
                  অন্তর্বর্তী সরকারের সময় তরুণদের প্রশিক্ষণ প্রকল্পে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ইউনূস-আসিফ উপদেষ্টা চক্রের অর্থ পাচার, তদবির বাণিজ্য ও সুইস ব্যাংকে অর্থ জমা বৃদ্ধির বিশ্লেষণ।
দেশের তরুণদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার নামে শুরু হয়েছে আরেকটি ‘দুর্নীতির মহাযজ্ঞ’। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মোবাইল সার্ভিসিং প্রশিক্ষণ প্রকল্পটি এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে—৪৯১ কোটি টাকার এই প্রকল্পে ব্যয়ের অস্বাভাবিক অঙ্কে উঠেছে দুর্নীতির অভিযোগ। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এর পেছনে রয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মহলের চক্রান্ত, যেখানে মূল ভূমিকা রাখছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
প্রকল্পে ৩৮,৪০০ জন তরুণকে প্রশিক্ষণের জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৪৯১ কোটি টাকা—অর্থাৎ প্রতি প্রশিক্ষণার্থীর জন্য এক লাখ ৩১ হাজার টাকার বেশি।
পরিকল্পনা কমিশন প্রশ্ন তুলেছে: কেন এই প্রশিক্ষণে ব্যয় এত বেশি?
সংশ্লিষ্টদের মতে, ব্যয় বাড়িয়ে নির্দিষ্ট মহলকে মুনাফা পাইয়ে দেওয়ার পরিকল্পনাই ছিল এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, ড. ইউনূসের শাসনামলে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা অর্থ ৩৩ গুণ বেড়েছে।
২০২৩ সালের শেষে যেখানে জমা ছিল ৩৯৬ কোটি টাকা, ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮,৯৭২ কোটি টাকায়।
অর্থনীতিবিদদের মতে, “৫ আগস্টের পর হঠাৎ এই অর্থ জমার প্রবণতা রাজনৈতিক পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত।”
বড় কোনো উন্নয়ন প্রকল্প বা রিজার্ভ বৃদ্ধি না ঘটলেও সুইজারল্যান্ডে অর্থ প্রবাহের এই ঊর্ধ্বগতি ইঙ্গিত দেয়—রাষ্ট্রীয় উচ্চপর্যায় থেকেই অর্থ পাচার হয়েছে।
ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সাবেক এপিএস মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে শত কোটি টাকার তদবির বাণিজ্যের তদন্ত করছে দুদক।
অনুসন্ধানী সাংবাদিক নাজমুস সাকিবের প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, বদলির জন্য এক যুগ্ম সচিবের কাছ থেকে তিনি ২০ কোটি টাকা ঘুষ দাবি করেছিলেন।
অন্যদিকে, সাবেক তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের পিএ আতিক মোর্শেদ-এর বিরুদ্ধে রয়েছে ১৫০ কোটি টাকা বেহাতের অভিযোগ।
তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির নতুন অধ্যায় প্রকাশ পেয়েছে—
অস্ট্রেলিয়ার Commonwealth Bank-এ তাঁর ভাইয়ের অ্যাকাউন্টে বিদেশি কমিশনের নামে কোটি কোটি টাকার লেনদেন শনাক্ত করেছে AUSTRAC।
ছাত্রনেতাদের ক্ষমতার অপব্যবহার
যারা একসময় “গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার”-এর নামে আন্দোলন করেছিল, আজ তারা ক্ষমতার আসনে বসে দুর্নীতির মহোৎসব চালাচ্ছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইউনূস সরকারের ছাত্রনেতা-উপদেষ্টারা আন্দোলনের আদর্শ নয়, বরং বিদেশি পৃষ্ঠপোষকতা ও ব্যক্তিস্বার্থে প্রণোদিত।
এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে—দেশের তরুণদের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো কি আদৌ দক্ষতা বাড়াচ্ছে, নাকি কেবল দুর্নীতির আরেকটি মুখোশ হয়ে উঠছে?
অন্তর্বর্তী সরকারের এই সময়টায় প্রশাসন, ব্যাংকিং ব্যবস্থা ও উন্নয়ন প্রকল্প—সবখানেই অস্বচ্ছতা ও লুটপাটের ছাপ স্পষ্ট।
তরুণদের ভবিষ্যৎ গড়ার নামে যদি দুর্নীতির সাম্রাজ্য গড়ে ওঠে, তবে সেটি শুধু আর্থিক নয়—নৈতিক পতনেরও প্রতীক।
ইউনূস সরকারের এই অর্থনৈতিক অনিয়ম ও উপদেষ্টা-চক্রের দুর্নীতির চিত্র দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 
                         
         
         
        