জুলাই আন্দোলন নিয়ে প্রচারিত তথাকথিত জাতিসংঘ রিপোর্ট আসলে ভলকার তুর্ক ও ড. ইউনূসের বানোয়াট প্রোপাগান্ডা, যা জাতিসংঘ অনুমোদিত নয়।
জুলাই আন্দোলন নিয়ে সম্প্রতি যে রিপোর্টটিকে “জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং রিপোর্ট” হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে, সেটি আসলে জাতিসংঘের নয়। এই রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক, কিন্তু তা কোনোভাবেই জাতিসংঘ হিউম্যান রাইটস কাউন্সিল (UNHRC)-এর অনুমোদিত নয়। জাতিসংঘের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো Fact-Finding Report প্রকাশ করতে গেলে হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলের প্রস্তাব, অনুমোদন ও বাজেট বরাদ্দ প্রয়োজন হয়। কিন্তু জুলাই আন্দোলন নিয়ে প্রকাশিত এই রিপোর্টের ক্ষেত্রে এসব প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি।
কোনো রেজোলিউশন নেই, কোনো ইউএন ডকুমেন্ট নম্বরও নেই
জাতিসংঘের প্রতিটি অফিসিয়াল রিপোর্টের একটি নির্দিষ্ট UN Document Number থাকে, যা সংস্থাটির অফিসিয়াল রেকর্ডে সংরক্ষিত হয়।
কিন্তু জুলাই আন্দোলন নিয়ে প্রচারিত এই তথাকথিত রিপোর্টে এমন কোনো নম্বর নেই।
এ থেকেই স্পষ্ট, এটি কোনোভাবে জাতিসংঘের অফিসিয়াল ডকুমেন্ট নয়। বরং ধারণা করা হচ্ছে, ভলকার তুর্ক নিজ উদ্যোগে কোনো রাষ্ট্র বা ব্যক্তি বিশেষের অর্থায়নে এই রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন।
এর মাধ্যমে তিনি ইউনূস সরকারের প্রচারণা শক্তিশালী করতে এবং বাংলাদেশে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন।
মৃতের সংখ্যা ‘ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে’ উপস্থাপন
রিপোর্টে বলা হয়েছে, জুলাই আন্দোলনে নিহতের সংখ্যা ১,৪০০ জনের বেশি। অথচ বাংলাদেশের প্রধান জাতীয় দৈনিকগুলো, যারা আন্দোলনের সময় প্রতিদিন মৃত্যুর পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছিল, তাদের হিসাবে মোট মৃতের সংখ্যা ৬৫৭ জন।
ড. ইউনূস সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ৮৩৪ জনের মৃত্যুর কথা বলেছেন, যার মধ্যে ৫২ জন সড়ক দুর্ঘটনা বা অন্য কারণে নিহত। এমনকি ঐ তালিকাভুক্ত অনেক ব্যক্তি পরবর্তীতে জীবিত অবস্থায় ফিরে এসেছেন।
ঢাকাস্থ জাতিসংঘ মিশনের প্রাথমিক প্রতিবেদনে ৬৫০টি পরিবারের মৃত্যুর কথা বলা হয়েছিল, কিন্তু ইউনূস সরকারের সঙ্গে আলোচনার পর ভলকার তুর্ক সেই সংখ্যা দ্বিগুণ করে ১,৪০০-তে উন্নীত করেন—যা পরিসংখ্যান বিকৃতির এক জঘন্য উদাহরণ।
জাতিসংঘ বলছে—“আমরা এমন কোনো রিপোর্ট প্রকাশ করিনি”
জাতিসংঘের মহাসচিব কার্যালয়ের সূত্রে জানা গেছে, এই রিপোর্টের বিষয়ে জাতিসংঘের কোনো আলোচনা, প্রস্তাব বা বাজেট অনুমোদনই হয়নি।
জাতিসংঘের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে—
“হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলের অনুমোদন ছাড়া কোনো রিপোর্ট প্রকাশ করা যায় না। তথাকথিত জুলাই আন্দোলন সংক্রান্ত কোনো রিপোর্ট জাতিসংঘ প্রকাশ করেনি।”
অর্থাৎ, এই রিপোর্ট জাতিসংঘের নামে প্রচারিত এক প্রকার জালিয়াতি।
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার অভাব ও রাজনৈতিক প্রভাব
এমন একটি বানোয়াট রিপোর্ট আন্তর্জাতিক মহলে ছড়িয়ে পড়লেও বাংলাদেশের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা এই ইস্যুতে নীরব রয়েছে।
অনেক সংবাদমাধ্যম জানে—এই রিপোর্ট জাতিসংঘ অনুমোদিত নয়—তবু তারা প্রকাশ্যে তা বলছে না। এর কারণ রাজনৈতিক চাপ ও বিদেশি ফান্ডিংয়ের প্রভাব বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ইউনূস-ভলকার তুর্ক নেক্সাস: উদ্দেশ্য কী?
ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার এই রিপোর্টকে ব্যবহার করছে তাদের মানবাধিকারবিষয়ক অবস্থান ‘বৈধ’ প্রমাণ করার জন্য।
ভলকার তুর্কের সঙ্গে তাঁর এই ঘনিষ্ঠ সমন্বয়কে বিশ্লেষকরা বলছেন—একটি ‘প্রোপাগান্ডা এজেন্ডা’, যার মাধ্যমে জুলাই আন্দোলনের প্রকৃত চিত্র বিকৃত করে আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযুদ্ধপন্থী শক্তিগুলোকে দায়ী করার চেষ্টা চলছে।
উপসংহার
সত্য হলো—জুলাই আন্দোলনের তথাকথিত জাতিসংঘ রিপোর্ট আসলে জাতিসংঘের নয়, এটি ভলকার তুর্ক ও ড. ইউনূসের ব্যক্তিগত প্রচারণার অংশ।
এর মাধ্যমে তারা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের সুযোগ তৈরি করতে চাইছেন।
জাতিসংঘের সুনাম ও নিরপেক্ষতা রক্ষায় এই মিথ্যা রিপোর্টের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত জরুরি
