 
                  আওয়ামী লিগের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি সতর্ক করেছেন— আওয়ামী লিগকে বাদ দিয়ে নির্বাচন হলে তা হবে ভাঁওতাবাজি ও প্রহসনের ভোট। ইউনুস সরকারের ভূমিকা নিয়ে তুলেছেন গুরুতর অভিযোগ।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক বছরের নীরবতার পর আবারও সরব হয়েছেন শেখ হাসিনার পুত্র ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন— আওয়ামী লিগকে বাদ দিয়ে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা মানে হবে “এক ধরনের ভাঁওতাবাজি”, যা দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে আরও নাজুক করে তুলবে।
জয়ের এই বক্তব্য কেবল একটি রাজনৈতিক মন্তব্য নয়; এটি মূলত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর একটি কৌশলগত চাপ সৃষ্টি করার প্রচেষ্টা।
তিনি সরাসরি আহ্বান জানিয়েছেন, “আওয়ামী লিগের কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।”
জয় স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, আওয়ামী লিগকে নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য সময় না দিলে নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও।
তাঁর ভাষায়, “শেষ মুহূর্তে অনুমতি দিলে সেটি হবে এক প্রহসনের ভোট।”
এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি দুটি বার্তা দিয়েছেন—
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সতর্ক করা, যেন তারা অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের ওপর চাপ সৃষ্টি করে;
ইউনুস সরকারের প্রতি রাজনৈতিক বার্তা, যে আওয়ামী লিগকে বাদ দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকা কঠিন হবে।
দীর্ঘদিন নীরব থাকার পর জয়ের এই সাক্ষাৎকার দলীয় মহলে স্বস্তি এনেছে।
আওয়ামী লিগের নবীন ও মধ্যম নেতৃত্ব মনে করছে, জয় যদি আরও সক্রিয় হন, তাহলে নেতৃত্বে একটি প্রজন্মগত ভারসাম্য আসবে।
দলের সূত্র অনুযায়ী, তিনি ও বোন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল আড়ালে থেকেই দলের প্রচার ও সোশ্যাল মিডিয়া নীতি পরিচালনা করছেন।
সাক্ষাৎকারে জয় সরাসরি অভিযোগ করেন, ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার উগ্র ইসলামপন্থীদের সঙ্গে আপস করছে।
তাঁর ভাষায়, “বাংলাদেশ অস্থিতিশীল থাকলে ইসলামপন্থীরাই লাভবান হবে।”
তিনি আরও বলেন, ইউনুস সরকার আওয়ামী লিগ নেতাদের বিরুদ্ধে ‘ন্যায়বিচারের ছদ্মবেশে রাজনৈতিক প্রতিশোধ’ নিচ্ছে।
জয়ের দাবি অনুযায়ী, অভ্যুত্থানের পর এক বছরে আওয়ামী লিগের প্রায় ৫০০ কর্মী নিহত এবং কয়েক লক্ষ নেতা-কর্মী কারাগারে আটক রয়েছেন।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে তিনি ইউনুস সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন।
আন্তর্জাতিক চাপ ও মানবাধিকার সংস্থার অবস্থান
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, সিপিজে (Committee to Protect Journalists)সহ ছয়টি আন্তর্জাতিক সংস্থা ইতিমধ্যে ইউনুস সরকারকে চিঠি দিয়ে আওয়ামী লিগের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
তারা বলেছে, এই নিষেধাজ্ঞা মতপ্রকাশ ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের সাংবিধানিক অধিকারকে লঙ্ঘন করছে।
জয়ের বক্তব্যে সেই আন্তর্জাতিক উদ্বেগের প্রতিধ্বনি স্পষ্ট।
জয়ের বক্তব্যে ইঙ্গিত রয়েছে— আওয়ামী লিগকে মাঠের বাইরে রাখলে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামি রাজনীতিতে পুনরুত্থান ঘটাতে পারে।
গত এক বছরে জামায়াত রাজনীতিতে ফিরে এসে দ্রুত সংগঠন গড়ে তুলেছে।
বিএনপি আবারো মূলধারার রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে ফিরছে।
এই বাস্তবতা জয়ের উদ্বেগকে বাস্তবসম্মত করে তুলছে।
জয়ের এই সাক্ষাৎকার কেবল ব্যক্তিগত মন্তব্য নয়; এটি আওয়ামী লিগের ভবিষ্যৎ কৌশলের একটি বার্তা।
তিনি একদিকে নিজের দলকে আন্তর্জাতিক সমর্থনের আওতায় আনতে চাইছেন, অন্যদিকে ইউনুস সরকারের ওপর চাপ তৈরি করছেন—
যেন ২০২৬ সালের নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে বাধ্য হতে হয়।
অর্থাৎ, জয়ের বক্তব্যের কেন্দ্রে রয়েছে রাজনৈতিক ভারসাম্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও আন্তর্জাতিক বৈধতা নিশ্চিত করা।
বাংলাদেশের রাজনীতি আবারও এক সঙ্কটপূর্ণ মোড়ে দাঁড়িয়ে।
একদিকে অন্তর্বর্তী সরকার, অন্যদিকে নিষিদ্ধ আওয়ামী লিগের নেতারা।
এই প্রেক্ষাপটে জয়ের বক্তব্য যেন এক রাজনৈতিক টার্নিং পয়েন্ট, যা দেশের ভবিষ্যৎ নির্বাচনের দিকনির্দেশনা বদলে দিতে পারে।
যদি আওয়ামী লিগকে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ফেরানো না হয়, তবে ২০২৬ সালের নির্বাচন যে বৈধতা সংকটে পড়বে— তা এখন থেকেই স্পষ্ট।
সজীব ওয়াজেদ জয়ের এই সতর্কবাণী সেই বাস্তবতারই প্রতিফলন।

 
                         
         
         
        