মিয়ানমারের রাখাইনে বাংলাদেশ সীমান্তে আরাকান আর্মির ১০০ মিলিয়ন ডলারের সামরিক শক্তিবৃদ্ধি উত্তেজনা বাড়াচ্ছে, জটিল হচ্ছে আঞ্চলিক নিরাপত্তা।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় আরাকান আর্মি (AA) প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলারের সমরাস্ত্র ও সরঞ্জাম মোতায়েনের পরিকল্পনা নিয়েছে। এই বিশাল সামরিক শক্তিবৃদ্ধি সরাসরি বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, ইউনাইটেড লীগ অফ আরাকান (ULA)-এর অধীনে পরিচালিত এই গোষ্ঠী মংডু এবং বুথিডং এলাকায় সীমান্ত প্রতিরক্ষা ঘাঁটি শক্তিশালী করছে। তাদের মূল লক্ষ্য সীমান্তের রোহিঙ্গা গেরিলা সংগঠন আরসা (ARSA)-র তৎপরতা রোধ করা এবং রাখাইন অঞ্চলে নিজেদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা।
অস্ত্র ও সরঞ্জাম: ভারী যুদ্ধ প্রস্তুতি
স্থানীয় নিরাপত্তা সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, এই সামরিক শক্তিবৃদ্ধির অংশ হিসেবে আরাকান আর্মি কিনছে –
- অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট সিস্টেম ও ভারী মর্টার,
- নাইট ভিশন ও স্যাটেলাইট নজরদারি ড্রোন,
- দূরপাল্লার যোগাযোগ সরঞ্জাম ও কমান্ড সেন্টার স্থাপনা।
এই অস্ত্র ও প্রযুক্তি দিয়ে মংডু-বুথিডং করিডরকে ‘হাই-সিকিউরিটি বাফার জোনে’ রূপান্তরিত করা হবে।
এটি মূলত আরাকান আর্মির জন্য একটি কৌশলগত ঢাল, যা তাদের অবস্থানকে রক্ষণাত্মক থেকে আক্রমণাত্মক প্রতিরক্ষা কৌশলে রূপান্তরিত করবে।
বাংলাদেশের নিরাপত্তা উদ্বেগ বাড়ছে
এই সামরিক অবস্থান বাংলাদেশের জন্যও উদ্বেগের। কারণ সীমান্তবর্তী এই অঞ্চলগুলো থেকে আগেও গোলাগুলি, গুলিবিনিময় ও মর্টার হামলার ঘটনা ঘটেছে।
সীমান্তে বিপুল পরিমাণ আধুনিক অস্ত্র মোতায়েন হলে, সেটি বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি)-র জন্য নতুন নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, আরাকান আর্মির এই অবস্থান দুই দেশের মধ্যে আস্থার ঘাটতি বাড়াবে এবং সীমান্তে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর অনুপ্রবেশ রোধ আরও কঠিন করে তুলবে।
আঞ্চলিক প্রভাব ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
আঞ্চলিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ রাখাইন রাজ্যে মিলিটারাইজেশনের নতুন অধ্যায় সূচনা করছে। এর ফলে শুধু মিয়ানমার নয়, বাংলাদেশ, ভারত ও চীনের কৌশলগত স্বার্থেও প্রভাব পড়বে।
জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর উদ্বেগ—
এই সামরিক প্রস্তুতি রাখাইনের মানবিক পরিস্থিতি ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে আরও অনিশ্চিত করে তুলবে। অনেকেই মনে করছেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অবস্থান এই সংঘাতের বলি হতে পারে।
বিশ্লেষণ: কৌশল নাকি ভয় দেখানো?
আরাকান আর্মির এই শক্তিবৃদ্ধি কেবল প্রতিরক্ষামূলক নয়, বরং এটি তাদের রাজনৈতিক ও ভূখণ্ডীয় নিয়ন্ত্রণের কৌশলগত প্রদর্শন।
স্থানীয় বিশ্লেষকদের মতে, এটি একদিকে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে, অন্যদিকে বাংলাদেশের সীমান্ত নীতিকেও পরীক্ষার মুখে ফেলছে।
একজন আঞ্চলিক বিশেষজ্ঞের মতে,
“আরাকান আর্মি এখন রাখাইনের প্রকৃত নিয়ন্ত্রক হতে চায়। তাদের এই সামরিক প্রস্তুতি কেবল যুদ্ধ নয়, ভবিষ্যতের রাষ্ট্র কাঠামোর জন্য ক্ষমতার দাবি।”
উপসংহার
বাংলাদেশ সীমান্তে আরাকান আর্মির ১০০ মিলিয়ন ডলারের সমরাস্ত্র মোতায়েন পরিকল্পনা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
সীমান্ত অঞ্চলে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিলে, এর প্রভাব পড়বে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, সীমান্ত নিরাপত্তা, এবং দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতেও।
কৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকে, এটি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের বাইরে গিয়ে এখন বাংলাদেশকেও সরাসরি জড়াতে পারে,
— যা আগামী মাসগুলোতে আন্তর্জাতিক কূটনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে।
