 
                  গোলাম মাওলা রনি বলছেন, বর্তমান পর্যায়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি হলেন অধ্যাপক গোলাম আজম-এর পুত্র আবদুল্লাহিল আমান আযমী। তার রাজনৈতিক অবস্থান, সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ ও জামায়াতে ইসলামী-র প্রভাব-প্রসার-সহ বিষয়গুলো এক বিশ্লেষণাত্মক পর্যালোচনায়।
বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিসরে যারা ‘ক্ষমতা’ বা ‘নিয়ন্ত্রণ’-চাবিকাঠি ধরে রেখেছেন, তাদের তালিকায় নিয়মিত উঠে আসে সেনা-নিয়ন্ত্রিত বা ইসলামপন্থী রাজনৈতিক গোষ্ঠীর নাম। তবে সাবেক সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক গোলাম মাওলা রনির দাবি অনুযায়ী, এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রভাবশালী ব্যক্তি হচ্ছেন অধ্যাপক গোলাম আজম-এর ছেলে আবদুল্লাহিল আমান আযমী।
তিনি বলেন:
“এই মুহূর্তে সরকারের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী যে গ্রুপ, সেটি হলো জামায়াতে ইসলামী। দৃশ্যপটে এখন আমার কাছে মনে হচ্ছে, আমান আযমীর ইশারায় সব হচ্ছে।”
রনির এই দাবি একাধিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনায় নেয়া জরুরি।
রনির যুক্তি হলো — জামায়াতে ইসলামী যে রাজনৈতিক গোষ্ঠী, তার কার্যকারিতা ও নিয়ন্ত্রণ এখন একার নয়; সেই গোষ্ঠীর অগ্রভাগে বা অন্তত গুরুত্বপূর্ণভাবে অবস্থান করছেন আমান আযমী।
জামায়াতে-র গতিশীলতা, মিডিয়া-উপস্থান ও সংগঠিত আন্দোলন-ক্ষমতায় এই ব্যক্তির অবর্তমানে হয়তো এমন গতিবেগ ধরতে পারতো না।
রনির বক্তব্য অনুযায়ী আমান আযমীর সঙ্গে সেনাপ্রধানের কথা হয়েছে, যেখানে এক ধরনের প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।
যদি তা সত্য হয়, তাহলে এটি এমন এক ক্ষমতার আনুশাসনিক দিক নির্দেশ করে যা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক বা সামরিক স্থিতিতে এক অনিবার্য অবস্থান নির্দেশ করে।
তিনি বলেন:
“তিনি তার সঙ্গে সেনাপ্রধানের কথা হয়েছে এবং জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান করজোড়ে তাকে মিনতি করে প্রস্তাবনা দিয়েছিলেন।”
এই ধরনের সম্পর্ক শুধুই সাংগঠনিক নয় — এটি ক্ষমতার অভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্ক এবং নিয়ন্ত্রক শক্তির হিংস্র মুখ।
রনি আরও বলেন, আমান আযমীর কথাবার্তা, মিডিয়ায় দেখা দেওয়া, প্রতিমূর্তি সব কিছুতেই একটা ভাব এসেছে — “নতুন একটা জিনিস বা কিছু একটা করতে চাচ্ছেন।”
অর্থাৎ, শুধু অস্তিত্ব নেই, অর্জন ও প্রচারণা রয়েছে।
মিডিয়া-উপস্থিতি আজ রাজনৈতিক নেতৃত্বের অপরিহার্য অংশ।
এটি জনসাধারণের সামনে ‘ক্ষমতার প্রতিফলন’ হিসেবে কাজ করে।
ইতিহাস ও তুলনামূলক বিশ্লেষণ
রনি উল্লেখ করেছেন, এর আগে স্বাধীন বাংলাদেশের কোনো রাষ্ট্রনায়ক — শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান বা হোসেন মোহাম্মদ এরশাদ —
সেনাবাহিনীর সার্ভিং অফিসারদের মার্শাল ল আদালত-সিভিল আদালতে আনার সাহস দেখাতে পারেননি।
কিন্তু আমান আযমীর নেতৃত্বে এমন একটি কার্যপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে রনি দাবী করেন।
এই তুলনা রাজনৈতিক দৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি ‘নতুন ধরনের ক্ষমতা নিরীক্ষণ’ নির্দেশ করে।
তবে এই বিশ্লেষণ সম্পূর্ণ রাখা যাবে না যদি সংশয় ও বিপত্তি বিবেচনায় না নেওয়া হয়।
গোলাম মাওলা রনির দাবি যে আবদুল্লাহিল আমান আযমী বর্তমানে দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি — এটি একটি তীব্র প্রেক্ষাপটভিত্তিক বিশ্লেষণ।
সত্যিই তিনি সামাজিক মিডিয়া, রাজনৈতিক সংগঠন, সেনা-সংশ্লিষ্ট যোগাযোগ ও জনমত নিয়ন্ত্রণের ধাপগুলোতে সক্রিয়ভাবে উপস্থাপন হচ্ছেন।
তবে “সবকিছুর ইশারায় হচ্ছে” পর্যায়ে এই দাবি নিয়ে যুক্তি ও বিপর্যয় উভয়ই আছে।
যতক্ষণ পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ কাঠামো, নীতি-প্রবাহ ও কার্যকর নিয়ন্ত্রণের কাঠামোর মাধ্যমে বিশ্লেষিত হবে, ততক্ষণ এটি একটি সম্ভাব্য রূপকথার থেকেও বেশি নয়।
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংযোগ, সেনাবাহিনী-সামাজিক সংগঠন-রাজনৈতিক গোষ্ঠীর একীভূত দক্ষতা একদিকে যেমন নতুন ক্ষমতার মডেল নির্দেশ করতে পারে,
অন্য দিকে সেটি উদ্বেগ ও সংবিধানিক নিয়ন্ত্রক চ্যালেঞ্জও সামনে নিয়ে আসতে পারে।
এই প্রেক্ষাপটে, আমান আযমীর ক্ষমতার গতিপথ ও কার্যকর নিয়ন্ত্রণ-ক্ষমতা মনিটর করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 
                         
         
         
        