অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস সচিব শফিকুল আলমের বিরুদ্ধে লুটপাট, প্রভাব খাটানো ও নিজের ভাইকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক বানানোর অভিযোগে প্রশাসনে তীব্র সমালোচনা। স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের ‘স্বচ্ছতা’ ও ‘দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন’ গড়ার ঘোষণার মধ্যেই ঘটেছে এক বিতর্কিত নিয়োগ—প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের ছোট ভাই ড. আবু নছর মোহাম্মদ আব্দুল্লাহকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের অভ্যন্তরে এই নিয়োগকে অনেকে বলছেন, “প্রভাবের সর্বশেষ প্রদর্শনী।”
ড. আব্দুল্লাহ বর্তমানে স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিকল্পনা অধিশাখা–১ এর যুগ্ম সচিব হিসেবে দায়িত্বে আছেন।
এর পাশাপাশি তিনি এখন নাসিক প্রশাসকের দায়িত্বও পালন করবেন—যা অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক এবং প্রশাসনিকভাবে অতি প্রভাবশালী একটি পদ।
অর্থাৎ, অন্তর্বর্তী সরকারের মূল মিডিয়া নিয়ন্ত্রক প্রেস সচিবের ভাই এখন দেশের অন্যতম শিল্পবাণিজ্যিক শহরের প্রশাসক।
সরকারি নিয়োগের আদেশটি এলজিআরডি মন্ত্রণালয় থেকে ১ সেপ্টেম্বর জারি করা হয়, এবং সেপ্টেম্বরের শুরুতেই তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
এই নিয়োগের সময়সন্ধি এবং পটভূমি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা শফিকুল আলমের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, সরকারি তহবিল লুটপাট এমনকি সাংবাদিক বিভূরঞ্জন সরকার হত্যার ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগও উঠেছে।
তারপরও প্রশাসনিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিজের ভাইয়ের নিয়োগ অনেকের চোখে “প্রভাবের নগ্ন ব্যবহার।”
প্রশাসনের একাধিক সূত্র বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে মাগুরা জেলার কর্মকর্তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা ও প্রভাবের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছে।
আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব লিয়াকত আলী মোল্লাও শফিকুল আলমের ঘনিষ্ঠজন এবং একই জেলার বাসিন্দা।
বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে তাঁদের একসঙ্গে দেখা যাওয়ার ছবি এখন সামাজিক মাধ্যমে ঘুরছে।
বাংলাদেশের শিল্পবাণিজ্যের হৃদপিণ্ড নারায়ণগঞ্জ।
এখানে প্রশাসকের পদ শুধু প্রশাসনিক নয়—রাজনৈতিক প্রভাব ও অর্থনৈতিক স্বার্থেরও প্রতীক।
যে শহরটির রাজনীতি, ব্যবসা ও শ্রমিক আন্দোলন দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় রাজনীতির প্রতিফলন ঘটিয়েছে, সেখানে প্রেস সচিবের ভাইয়ের নিয়োগ অনেককেই ভাবাচ্ছে।
সমালোচকদের মতে, এটি অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতার ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করছে।
জনমতের প্রতিক্রিয়া ও প্রশ্নবিদ্ধ প্রশাসন
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই নিয়োগকে ঘিরে প্রবল সমালোচনা চলছে।
অনেকে বলছেন—যে সরকার দুর্নীতি দমন ও প্রশাসনের সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তার ভেতরেই এখন পরিবারকেন্দ্রিক নিয়োগের দৃষ্টান্ত তৈরি হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং প্রশাসনিক স্বচ্ছতা রক্ষায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর প্রতি দাবি উঠেছে—
এই নিয়োগ ও শফিকুল আলমের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো তদন্ত করতে হবে।
প্রশাসনের স্বচ্ছতা তখনই টেকে, যখন ক্ষমতার প্রভাবে নিয়োগ নয়, যোগ্যতা ও পেশাগত মেধাই প্রধান বিবেচ্য হয়।
কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে যেভাবে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ মাথা তুলছে, তাতে এই সরকারের “বিশ্বাসযোগ্যতা” গুরুতর প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
প্রেস সচিবের এই প্রভাব ও পারিবারিক নিয়োগ প্রশাসনে যে বার্তা পাঠাচ্ছে, তা হলো—ক্ষমতা বদলালেও সংস্কৃতি বদলায়নি।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস সচিব শফিকুল আলমের ভাইয়ের প্রশাসক নিয়োগ ঘটনাটি শুধু একক পরিবারের সুবিধা নয়—এটি এক প্রশাসনিক সংস্কৃতির প্রতিফলন, যেখানে ক্ষমতা মানে ব্যক্তিগত প্রভাবের বিস্তার।
যদি সরকার এই নিয়োগের যৌক্তিকতা ও স্বচ্ছতা প্রমাণে ব্যর্থ হয়, তবে “দুর্নীতিমুক্ত” সরকারের ঘোষণা ইতিহাসের আরেকটি ব্যর্থ প্রতিশ্রুতিতে পরিণত হতে পারে।
