জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী দাবি করেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল নিজেই প্রধান উপদেষ্টা হতে চেয়েছিলেন। এই বক্তব্যকে ঘিরে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে অন্তর্বর্তী সরকারের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, আসিফ নজরুলের ভূমিকা ও জাতীয় ঐক্যমতের ভবিষ্যৎ নিয়ে।
অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলকে ঘিরে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে তিনি দাবি করেন— “আসিফ নজরুল এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হতে চেয়েছিলেন।”
এই বক্তব্য শুধু একটি ব্যক্তিগত অভিপ্রায় প্রকাশ নয়; বরং এটি ইঙ্গিত করছে অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরে থাকা নেতৃত্ব-সংকট, আস্থাহীনতা ও ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতার দিকে।
ড. আসিফ নজরুল বরাবরই ছিলেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক বিতর্কিত কিন্তু প্রভাবশালী বুদ্ধিজীবী কণ্ঠ।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তিনি ছিলেন সরকারের কট্টর সমালোচক।
কিন্তু ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা হিসেবে তার অন্তর্ভুক্তি অনেককে বিস্মিত করেছিল।
এখন যখন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী প্রকাশ্যে বলছেন তিনি প্রধান উপদেষ্টা হতে চেয়েছিলেন, তখন প্রশ্ন উঠছে—
- অন্তর্বর্তী সরকারের কাঠামো গঠনের সময় কী অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতা ছিল?
- ড. ইউনূসের সঙ্গে আসিফ নজরুলের সম্পর্ক আসলে কতটা রাজনৈতিক, আর কতটা কৌশলগত?
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী তার বক্তব্যে বলেন, “জাতীয় ঐক্যমত কমিশনের রিপোর্ট জমা দেওয়া জুলাই শহীদের বড় অর্জন।”
এই বক্তব্যে তিনি পরোক্ষভাবে বোঝাতে চেয়েছেন, জুলাই আন্দোলন ও ঐক্যমত কমিশন—দুটি প্রক্রিয়াই এনসিপির রাজনৈতিক আত্মবিশ্বাসের প্রতীক।
তার ভাষায়, “বাহাত্তরের পচা সংবিধান দিয়ে এই দেশ আর চলবে না।”
এ বক্তব্য মূলত এনসিপির সাংবিধানিক সংস্কার এজেন্ডারই প্রতিফলন, যা তারা “বুলেট রেভুলেশন” পরবর্তী “ব্যালট রেভুলেশন”-এর অংশ হিসেবে প্রচার করছে।
ক্ষমতার অভ্যন্তরীণ স্রোত
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর বক্তব্যে তিনটি স্তর লক্ষণীয়—
অন্তর্বর্তী সরকারের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব উন্মোচন
– “আসিফ নজরুল প্রধান উপদেষ্টা হতে চেয়েছিলেন” মন্তব্যটি সরাসরি ড. ইউনূসের নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
সংবিধান সংস্কার ও ‘বাহাত্তরের’ প্রত্যাখ্যান
– এটি মূলত এক রাজনৈতিক ধারণা, যেখানে তারা ‘নতুন প্রজাতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখছে।
বিএনপি-জামায়াত ও বিদেশি প্রভাবের অভিযোগ
– “একদল ভারতে, আরেকদল পাকিস্তানে পা দিয়ে রেখেছে”—এই বক্তব্যে জাতীয়তাবাদী অনুভূতির প্রতি আহ্বান এবং বিদেশি প্রভাবের বিরুদ্ধে জনমত তৈরির কৌশল স্পষ্ট।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর বক্তব্য প্রমাণ করে, অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরে মতপার্থক্য ও নেতৃত্ব সংকট আরও গভীর হচ্ছে।
একদিকে ড. ইউনূস আন্তর্জাতিক সমর্থনের মুখপাত্র, অন্যদিকে আসিফ নজরুলের মতো ব্যক্তি অভ্যন্তরীণ জনপ্রিয়তার ভরসায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন।
প্রশ্ন এখন একটাই—
“ড. ইউনূস কি তার উপদেষ্টাদের মধ্যে রাজনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে পারবেন, নাকি এই অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতাই অন্তর্বর্তী সরকারের ভবিষ্যৎকে অনিশ্চিত করবে?”
