জঙ্গি নেতা হাফিজ সাঈদের ঘনিষ্ঠ পাকিস্তানি বক্তা ইবতিসাম ইলাহি জহির আবারও বাংলাদেশে। তার সফর ঘিরে উদ্বেগে নিরাপত্তা সংস্থাগুলো।
পাকিস্তানের কট্টরপন্থী ইসলামি সংগঠন মারকাজি জামিয়াত আহলে হাদিস-এর সাধারণ সম্পাদক এবং জঙ্গি সংগঠন জামাত উদ দাওয়া প্রধান হাফিজ সাঈদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইবতিসাম ইলাহি জহির আবারও বাংলাদেশে এসেছেন।
তিনি ২৫ অক্টোবর সন্ধ্যায় রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দরে অবতরণ করেন এবং এটি তার দ্বিতীয় বাংলাদেশ সফর।
জানা গেছে, আল জামিয়া আস সালিফা নামের একটি সংগঠনের আমন্ত্রণে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন, যা আহলে হাদিস আন্দোলন বাংলাদেশের একটি সহযোগী গবেষণা সংস্থা।
তার সফর ঘিরে দেশের নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে তীব্র উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
ইউনূস সরকারের ‘নীরবতা’ ও গোয়েন্দা সতর্কতা
বিশেষ সূত্রগুলো জানিয়েছে, ড. ইউনূস সরকারের নীরব অবস্থানের সুযোগেই এই পাকিস্তানি বক্তার সফর সম্ভব হয়েছে।
যদিও বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলেনি, তবে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।
জঙ্গিবাদবিরোধী একাধিক কর্মকর্তা মনে করছেন, জহিরের এই সফর কোনো ধর্মীয় উদ্দেশ্যে নয়— বরং বাংলাদেশের ভেতরে জঙ্গি নেটওয়ার্ক পুনর্গঠনের প্রচেষ্টা হতে পারে।
জহিরের সফরসূচি: সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় ‘কৌশলগত’ সফর
ইবতিসাম ইলাহি জহিরের সফরের স্থান ও সময়সূচি বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়।
২৭ অক্টোবর তিনি রাজশাহী থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ গেছেন, যা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের সংলগ্ন এলাকা।
তিনি নাচোল ও গোমস্তাপুরে বেশ কিছু মসজিদে বক্তৃতা করবেন এবং আহলে হাদিস নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
এরপর তার সফরসূচি অনুযায়ী:
- ২৯-৩১ অক্টোবর: রংপুর, লালমনিরহাট ও নীলফামারী
- ১ নভেম্বর: জয়পুরহাট
- ৩ নভেম্বর: নওগাঁ
- ৬-৭ নভেম্বর: রাজশাহীর পবার ডাঙিপাড়ায় বড় সালাফি সম্মেলনে ভাষণ
- ৮ নভেম্বর: বাংলাদেশ ত্যাগ করে পাকিস্তান প্রত্যাবর্তন
এই সব জায়গাই ভারতীয় সীমান্তের কাছাকাছি, যা নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের কাছে সন্দেহজনক ইঙ্গিত বহন করছে।
পাকিস্তানি গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক ও হাফিজ সাঈদের প্রভাব
ইবতিসাম ইলাহি জহিরকে হাফিজ সাঈদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত করেছে আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা মহল।
হাফিজ সাঈদ ২০২০ সালে পাকিস্তানে ৭৮ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত, কিন্তু অভিযোগ রয়েছে যে তিনি আইএসআই-এর সহায়তায় জেল থেকেই জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
জহির তার বার্তাবাহক হিসেবে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন বলে গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে।
বাংলাদেশে তার উপস্থিতি জঙ্গি তৎপরতা পুনর্জাগরণের সম্ভাবনা তৈরি করছে।
বিতর্কিত বক্তব্য ও আন্তর্জাতিক সমালোচনা
জহিরের অতীত রেকর্ড তাকে একজন উগ্রবাদী বক্তা হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
তিনি একাধিকবার প্রকাশ্যে বলেছেন—
“ইহুদি ও খ্রিস্টানরা মুসলমানদের বন্ধু হতে পারে না”
“যে ইসলাম ত্যাগ করবে, তাকে হত্যা করতে হবে।”
২০১২ সালে যুক্তরাজ্যে তার “যৌন দাসত্ব” সমর্থনমূলক বক্তব্য ঘিরে ব্যাপক সমালোচনা হয়।
২০১৪ সালে তিনি জঙ্গি বক্তা জাকির নায়েকের সঙ্গে বৈঠক করেন, যিনি বর্তমানে ভারতে ও বাংলাদেশে নিষিদ্ধ বক্তা হিসেবে পরিচিত।
বাংলাদেশে সম্ভাব্য নিরাপত্তা ঝুঁকি
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জহিরের সফর কেবল ধর্মীয় প্রচারণা নয়; এটি দক্ষিণ এশিয়ায় পাকিস্তানি প্রভাব ও গোয়েন্দা পুনর্গঠনের অংশ হতে পারে।
বিশেষত, সীমান্ত সংলগ্ন এলাকাগুলোতে তার উপস্থিতি উগ্রবাদের নতুন ঘাঁটি তৈরির পূর্বাভাস দিতে পারে।
একজন সিনিয়র কর্মকর্তা মন্তব্য করেছেন—
“বাংলাদেশে তার বারবার প্রবেশ গোয়েন্দা সংস্থার জন্য উদ্বেগের বিষয়।
এই সফর নিঃসন্দেহে একটি বৃহত্তর কৌশলগত পরিকল্পনার অংশ।”
উপসংহার
যখন দক্ষিণ এশিয়া জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় একসাথে কাজ করছে, তখন পাকিস্তানি উগ্রবাদী বক্তার বাংলাদেশ সফর নিঃসন্দেহে অস্বস্তিকর প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে।
বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সতর্কতা যথেষ্ট হলেও, এই সফর অনুমোদনের রাজনৈতিক দায় কে নেবে— সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।
জঙ্গি সংযোগ, সীমান্ত-রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক চাপে ঢাকা পড়া এই সফর বাংলাদেশের নিরাপত্তা স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় সতর্ক সংকেত বয়ে আনছে।
