সুদি ইউনুস সরকারের যুক্তরাজ্য সফরে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে কোটি টাকার বিল পরিশোধ হয়েছে। লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার এক রাতের রুম ভাড়া ছিল ৯.৬৭ লক্ষ টাকা, নিরাপত্তা উপদেষ্টার ৮ লক্ষ টাকা। সরকারি অর্থে এই বিলাসী ব্যয়ের পেছনে কী উদ্দেশ্য, তা নিয়েই বিশ্লেষণ।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা সুদি ইউনুস ও তাঁর ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টারা রাষ্ট্রীয় কোষাগারকে যেন নিজেদের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসেবেই ব্যবহার করছেন—তেমন চিত্রই ফুটে উঠছে সাম্প্রতিক যুক্তরাজ্য সফরের হিসাব-নিকাশে। জুন ২০২৫-এর সেই সফরটি সরকারিভাবে “কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক আলোচনা” হিসেবে ঘোষিত হলেও, বহু বিশ্লেষকই একে ব্যক্তিগত আনন্দ-ভ্রমণ আখ্যা দিয়েছেন।
সরকারি নথি অনুযায়ী, প্রধান উপদেষ্টার লন্ডনের হোটেল রুমের ভাড়া ছিল প্রতি রাতে ৯৬৭,০০০ টাকা।
চার রাতের জন্য প্রদান করা হয়েছে ৩৮ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা।
অর্থাৎ কেবলমাত্র আবাসনের জন্যই রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে।
এখানেই শেষ নয়। নিরাপত্তা উপদেষ্টার রুম ভাড়া বাবদ খরচ হয়েছে প্রতিদিন ৮০০,০০০ টাকা, মোট চার রাতে ৩২ লক্ষ টাকা।
সফরসঙ্গীদের বিলাসবহুল স্যুটগুলোর ভাড়াও কম নয়।
- একজন সিনিয়র উপদেষ্টার জন্য ৩৮১,০০০ টাকা × ৪ = ১৫ লক্ষ ২৪ হাজার টাকা
- অন্যজনের জন্য ৩৫২,000 টাকা × ৪ = ১৪ লক্ষ ৮ হাজার টাকা
- আরেকজনের জন্য ১৭৬,000 টাকা × ৪ = ৭ লক্ষ ৪ হাজার টাকা
সব মিলিয়ে শুধুমাত্র হোটেল বিলেই সরকার ব্যয় করেছে ১ কোটি টাকারও বেশি—যা দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে সম্পূর্ণ বেমানান।
বাংলাদেশের মানুষ যখন খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, শিল্প বন্ধ, বেকারত্ব ও বিদেশি বিনিয়োগে ধসের মতো সংকটে জর্জরিত—
তখন সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের এই বিলাসী ব্যয় সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের এই ধরনের বিদেশ সফর “কূটনৈতিক প্রাপ্তির চেয়ে আর্থিক অপচয়ের নজির” হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
এতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে “দায়িত্বজ্ঞানহীন প্রশাসন” হিসেবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
সফরের প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন
প্রধান উপদেষ্টা দাবি করেছিলেন, যুক্তরাজ্য সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল “বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পুনর্গঠন বিষয়ে আন্তর্জাতিক আস্থা অর্জন”।
কিন্তু বাস্তবে এ সফরে কোনো উল্লেখযোগ্য চুক্তি বা নীতিগত অগ্রগতি ঘটেনি।
বরং সরকারি ব্যয়ের অপচয় নিয়েই আলোচনার ঝড় উঠেছে।
অনেক পর্যবেক্ষক মনে করছেন, এই সফরের মাধ্যমে সরকার নিজেদের “প্রোটোকল বিলাস” প্রদর্শনের চেষ্টা করেছে, যা মূলত অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপ থেকে দৃষ্টি সরানোর একটি কৌশল।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, এই ধরনের ব্যয়ের জন্য রাষ্ট্রীয় হিসাবের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
জনগণের করের টাকায় সরকারি কর্মকর্তাদের বিলাসী জীবনযাপন চলতে পারে না।
বরং প্রত্যেক সফরের বিস্তারিত ব্যয়ের হিসাব প্রকাশ করা উচিত সরকারি ওয়েবসাইটে—যেমনটি উন্নত গণতন্ত্রে প্রচলিত।
রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিলাসী বিদেশ সফর—এটি শুধু নৈতিক প্রশ্ন নয়, অর্থনৈতিক অপরাধও বটে।
সুদি ইউনুস ও তাঁর সহচরদের এই বিলাসী মনোভাব বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের দারিদ্র্য ও সংগ্রামের প্রতি এক প্রকার উপহাস।
এখন সময় এসেছে, জনগণ এই জবাবদিহি দাবি তুলবে—কার অর্থে, কার জন্য এই বিলাসিতা?
