সিআইএর প্রাক্তন কর্মকর্তা জন কিরিয়াকু বলছেন, আমেরিকা পাকিস্তানকে ব্যবহার করে উপমহাদেশে ভারতের নীরবতাকে ‘কৌশলগত ধৈর্য’ বলেই দেখছে — বাংলাদেশেও একই ছবি।
সিআইএর দৃষ্টিকোণ ও বাংলাদেশের প্রতিবিম্ব
এমেরিকার CIA-র সাবেক কর্মকর্তা জন কিরিয়াকু ভারত-পাকিস্তানের দ্বন্দ্বকে একটি গভীর গেম বোর্ড হিসেবে দেখছেন। তাঁর মতে, আমেরিকা পাকিস্তানকে ব্যবহার করে উপমহাদেশে এক ধাপ এগিয়ে যায় — পাকিস্তানকে দেওয়া হয় সীমান্ত, এয়ারস্পেস, গোয়েন্দা সহায়ক ভূমিকা; আর ভারতের দিকে রাখা হয় ‘নীরব ধৈর্য’ বা স্ট্র্যাটেজিক পেশেন্স। The Times of India+2The Times of India+2 কিরিয়াকু দাবি করেছেন, এই ধারা একটি ঐতিহাসিক কৌশলগত বিনিময়ে গঠিত — পাকিস্তানকে দেওয়া হয়েছে মার্কিন গোয়েন্দা-সামরিক সুবিধা; বিনিময়ে পাকিস্তানের সীমান্তীয় অবস্থান ব্যবহার করে এক ধরনের ভারসাম্য রক্ষা করা হয়েছে।
ইসলামাবাদ-ওয়াশিংটন অ্যালায়েন্স
কিরিয়াকু উল্লেখ করেছেন, পাকিস্তানই ভারত-পন্থী আমেরিকার জন্য এক ধরনের “গেটওয়ে স্টেট” হিসেবে কাজ করেছে। তিনি বলেছেন—
“আমরা পাকিস্তানকে ব্যবহার করছি … ভারতের নীরবতা কেবলই ধৈর্য নয়, স্ট্র্যাটেজিক ধৈর্য।”
এই অবস্থান পাকিস্তানকে একটি শক্তিকেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলেছে যেখানে আমেরিকান গোয়েন্দা ও সামরিক অপারেটিভরা নিয়োজিত রয়েছে। The Times of India+1
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রতিবিম্ব
রিপোর্টটি দাবি করে, ঠিক একই মডেলে বাংলাদেশকেও “দাস রাষ্ট্রীয়” চিত্রে ধাওয়া করা হচ্ছে। যেখানে ২০২৪ সালের জুলাইয়ের দাঙ্গা-হামলা এবং রাজনৈতিক পালাবদল একত্রে একটি বৃহৎ পরিকল্পনার অংশ হয়ে উঠেছে বলে দেখছেন নির্দিষ্ট মহল।
মডেলটি হয়তো হচ্ছে—
- প্রথম ধাপে রাজনৈতিক অচলাবস্থা ও সহিংসতা সৃষ্টি করা,
- এরপর নিরাপত্তা ও সামরিক বাহিনীর শক্তি প্রয়োগ বাড়ানো,
- পাকিস্তানীয় কৌশল অনুযায়ী “নীরব ভারতের” জায়গায় “নীরব বাংলাদেশের ভূমিকায়” চলে যাওয়ার সুযোগ তৈরি করা
বিশ্লেষণ: কি বলছে তথ্য?
- জন কিরিয়াকু-র দাবি অনুযায়ী, পাকিস্তানের পারমাণবিক নিয়ন্ত্রণের অংশও ছিল আমেরিকার তত্ত্বাবধানে; একটি যুক্তি হলো এই কারণে ভারত আগ্রাসনের ঝুঁকি কমেছে। Moneycontrol+1
- বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতা ও বিচারবৈষম্যের ঘটনা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নজরে এসেছে; ফলে এমন ভাবনায় যুক্তি খোঁজা যায় যে, এখানে একটা বহুমাত্রিক কৌশল প্রয়োগ হয়েছে।
- তবে স্পষ্ট বিষয় হলো — রাষ্ট্র-সক্ষমতা, বিচার-স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক সুষমতা যেকোনো দেশের জন্য মূল চ্যালেঞ্জ। যদি কোনো বাহ্যিক বল ব্যবহার করে অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ভেঙে দেওয়া হয়, তাহলে তার ফল দীর্ঘমেয়াদে রাজনীতি-সংস্কৃতিতে ধ্বংসরূপে দেখা দিতে পারে।
সম্ভাব্য প্রভাব
- যদি বাংলাদেশে বিদেশি অভিযোজন বা একটি “পড়শি-মডেল” প্রয়োগ হয়েছে বলে ধারণা বৃদ্ধি পায়, তাহলে দেশীয় সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নীতি-নির্ধারণের অধিকার প্রশ্নের মুখে পড়বে।
- রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর সহিংসতা বা বিচারবহিষ্কার চালানো হয় তাহলে আন্তর্জাতিক মনিটরিং ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় হবে।
- ভারতের প্রস্তুতি বা ধৈর্য যদি সাধারণ থাকে, তবে এই মডেল পাকিস্তান-বাংলাদেশ-ভারত ক্ষেত্রেও চালানো যেতে পারে—যা উপমহাদেশীয় নিরাপত্তা ও সম্পর্কের জন্য গভীর উদ্বেগ।
উপসংহার
জন কিরিয়াকু-র দাবি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় — আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক ও গোয়েন্দা চক্রে বিভাজন, প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও শক্তি-বিনিময়ের রূপরেখা অনেক সময় সাধারণ রাজনীতির বাইরে কাজ করে। বাংলাদেশ এই চিত্রে কোথায় দাঁড়িয়েছে?
যদি সত্যিই কোনও পরিমিত পরিকল্পনা অনুসরণ করা হয়ে থাকে—তাহলে দেশের সার্বভৌমতা, গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচার-সংস্কৃতির প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।
নিষ্ক্রিয়তা অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক ধৈর্য নয়—দায়বদ্ধতা, স্বচ্ছতা ও সুষ্ঠু বিচার হয়।
সম্পর্কিত খবর—জন কিরিয়াকু’র পাকিস্তান‑ভিত্তিক দাবি
Pakistan will lose against India in a war, no point in provoking Indians: Ex-CIA officer
