ঢাকা বিমানবন্দরে পাকিস্তানের জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জার লাগেজে ডামি অ্যাসল্ট রাইফেল ধরা পড়ার ঘটনায় সৃষ্ট কূটনৈতিক অস্বস্তি আলোচনায়। এটি কি প্রটোকল ভঙ্গ, না নিছক ভুলবোঝাবুঝি? বিশ্লেষণ করছেন আমাদের প্রতিবেদক।
ঢাকা বিমানবন্দরে পাকিস্তানের জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফ কমিটির চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জার লাগেজে একটি ডামি অ্যাসল্ট রাইফেল ধরা পড়ার ঘটনাটি নিছক “ভুলবোঝাবুঝি” হলেও, এটি কূটনৈতিক প্রটোকলের সূক্ষ্ম সীমারেখায় নতুন বিতর্ক উসকে দিয়েছে।
চার দিনের সরকারি সফর শেষে বিদায় মুহূর্তে ঘটে যাওয়া এই ঘটনাটি, বাংলাদেশের সামরিক কূটনীতির জন্য এক অপ্রত্যাশিত অস্বস্তির সৃষ্টি করে।
যদিও পরবর্তীতে জানা যায়, রাইফেলটি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে দেওয়া হয়েছিল —
তবু প্রশ্ন উঠেছে: উপহারটি বহনের প্রটোকল কোথায় ভঙ্গ হলো?
২৬ অক্টোবর বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান আনুষ্ঠানিকভাবে এই রাইফেলটি জেনারেল মির্জাকে “স্মারক” হিসেবে উপহার দেন।
রাইফেলটি ছিল একটি ৭.৬২ মিমি বিডি-০৮ — সম্পূর্ণ অকার্যকর, ফায়ারিং পিনবিহীন একটি প্রতিরূপ (ডামি)।
তবুও, বিমানবন্দরে এটি শনাক্ত হওয়ার পর যে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়,
তা প্রমাণ করে উপহারটি বহনের বিষয়ে পূর্বানুমতি নেওয়ার প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি।
আন্তর্জাতিক সামরিক প্রটোকলে এমন উপহার বহনের আগে দুই দেশের বিমানবন্দর নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা বাধ্যতামূলক।
বিশেষত অস্ত্র বা অস্ত্রসদৃশ কোনো বস্তু বহনের ক্ষেত্রে এটি সংবেদনশীল বিষয়।
২৮ অক্টোবর সন্ধ্যায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সিআইপি গেটে নিরাপত্তা স্ক্যানিংয়ের সময় ভারী লাগেজে সন্দেহজনক বস্তু শনাক্ত হয়।
খোলার পর দেখা যায়, সেটি স্মারক রাইফেল।
যদিও তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হলে বড় কোনো কূটনৈতিক জটিলতা তৈরি হয়নি, তবুও এই মুহূর্তটি উভয় দেশের কর্মকর্তাদের জন্য বিব্রতকর হয়ে ওঠে।
সামরিক সৌজন্য ও কূটনৈতিক সতর্কতা
বাংলাদেশ সামরিক কূটনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে সৌজন্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখলেও, এই ঘটনা একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে —
সামরিক কূটনীতি কখনোই নিছক সৌজন্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এখানে প্রতিটি প্রতীক ও বস্তু বহনের মধ্যেও থাকে নিরাপত্তা ও প্রটোকলের দায়বদ্ধতা।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের পক্ষে এটি নিছক ‘অসাবধানতা’ বলে দাবি করা হলেও,
দক্ষিণ এশিয়ার সামরিক সম্পর্কের সূক্ষ্ম ভারসাম্যের মধ্যে এই ধরনের ছোট ঘটনা বড় প্রভাব ফেলতে পারে
প্রটোকল ব্যর্থতা: উপহার বহনের আগে বিমানবন্দর নিরাপত্তা বিভাগকে অবহিত না করা এক প্রকার প্রশাসনিক ব্যর্থতা।
কূটনৈতিক বার্তা: বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সামরিক সম্পর্ক এখনও সংবেদনশীল পর্যায়ে আছে — এই ঘটনা তারই প্রতিফলন।
জনমত প্রতিক্রিয়া: সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে নানা ব্যঙ্গ ও সমালোচনা শুরু হয়েছে, যা সামরিক ইমেজের জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
ঢাকা বিমানবন্দরের এই ঘটনা হয়তো মুহূর্তের ভুলবোঝাবুঝি মাত্র।
কিন্তু এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় — সামরিক কূটনীতিতে প্রতিটি হাসি, করমর্দন ও উপহার—সবকিছুই নিরাপত্তা ও প্রটোকলের অধীন।
একটি ডামি রাইফেলও কখনো কখনো বাস্তব কূটনৈতিক “ট্রিগার” হয়ে উঠতে পারে।
