অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন প্রশ্ন তুলেছেন—মুক্তিযুদ্ধের নাম কি তবে ‘৭১ ডিল’? এনসিপির পাকিস্তান বৈঠক ও বিতর্কিত মন্তব্য নিয়ে জনমনে ক্ষোভ, বিশ্লেষণে উঠে এলো জাতির আত্মত্যাগের মর্যাদা রক্ষার প্রশ্ন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ কেবল একটি ঐতিহাসিক অধ্যায় নয়, বরং জাতীয় অস্তিত্বের মূলে প্রোথিত সংগ্রাম। সেই মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ, আত্মত্যাগ এবং স্বাধীনতার চেতনা নিয়ে কোনো প্রশ্ন তুললে তা স্বাভাবিকভাবেই বাঙালির আবেগকে নাড়িয়ে দেয়। সম্প্রতি পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের সঙ্গে ঢাকায় বৈঠক করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বৈঠক শেষে এনসিপি নেতাদের পক্ষ থেকে দেওয়া বক্তব্যে উঠে আসে ‘৭১ ডিল’ শব্দবন্ধ।
এ প্রসঙ্গ নিয়েই সরব হয়েছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী ও নির্মাতা মেহের আফরোজ শাওন।
ফেসবুক পোস্টে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন—
“৪৪ সেকেন্ড পার করে দেখলাম ‘৭১ ডিলের একটা ইস্যু’ও নাকি আছে, যেটা ওনাদের মতে দ্রুত সলভ করা উচিত।
মুক্তিযুদ্ধের নাম কি তবে ‘৭১ ডিল’ হয়ে গেল!”
‘৭১ ডিল’ শব্দবন্ধটি নিছক একটি রাজনৈতিক মন্তব্য হলেও এর ভেতরে লুকিয়ে আছে বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসের প্রতি অবমাননার ছায়া।
মুক্তিযুদ্ধ কোনো ‘চুক্তি’ ছিল না—এটি ছিল অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম, রক্তক্ষয়ী গণআন্দোলন এবং ৩০ লাখ শহীদের আত্মাহুতির ফসল।
কাজেই পাকিস্তানি প্রতিনিধি কিংবা কোনো রাজনৈতিক দল যখন একে “ডিল” আখ্যা দেয়, তখন সেটি স্বাভাবিকভাবেই জাতীয় মর্যাদার প্রতি আঘাত হিসেবে প্রতিভাত হয়।
শাওনের প্রশ্ন এখানেই—
“কেন পাকিস্তান? আর আপনাদের এই দায়িত্ব কে দিয়েছে?”।
এনসিপির প্রতিনিধি দল দাবি করেছে তারা জনগণের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের সুযোগ খুঁজছে।
কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ কি কখনো পাকিস্তানের সঙ্গে কোনো ‘ডিল’ চেয়েছে?
মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পাকিস্তান এখনও গণহত্যার দায় স্বীকার না করা একটি রাষ্ট্র।
ক্ষমাপ্রার্থনা, ক্ষতিপূরণ কিংবা দায়বদ্ধতার কোনো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ না নেওয়া পাকিস্তানের সঙ্গে ‘সম্পর্ক উন্নয়ন’ আলোচনার আগে মুক্তিযুদ্ধের সত্য ও বিচারকে পাশ কাটানো আসলে আত্মপরিচয়ের সংকট তৈরি করে।
শাওনের ফেসবুক পোস্টের নিচে নেটিজেনদের প্রতিক্রিয়াও প্রায় একই সুরে প্রতিধ্বনিত হয়েছে।
- “পাকিস্তান চাই না। পাকিস্তানের কিছু ডিল চাই না।”
- “ওনাদের কাছ থেকে কি শিখবো, বুঝলাম না কিছুই।”
এসব মন্তব্যে স্পষ্ট, জনমানসে পাকিস্তান এখনও একটি অমীমাংসিত ক্ষত।
‘৭১ ডিল’ শব্দবন্ধটি ব্যবহার করে এনসিপি নেতারা হয়তো রাজনৈতিক কূটনীতি দেখাতে চেয়েছেন।
কিন্তু বাস্তবে এটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
বাংলাদেশে যে কোনো রাজনৈতিক বা সামাজিক শক্তি যদি পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের আলোচনা করে, তবে প্রথম শর্ত হওয়া উচিত—১৯৭১ সালের গণহত্যা ও নির্যাতনের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি ও ক্ষমাপ্রার্থনা।
এর বাইরে কোনো সম্পর্ক গড়ে উঠলে তা হবে জাতির আত্মত্যাগকে অসম্মান করা।
শাওনের পোস্ট তাই কেবল একজন অভিনেত্রীর ক্ষোভ নয়, বরং জনমানসের অন্তর্নিহিত প্রতিফলন।
মুক্তিযুদ্ধকে কোনোভাবেই “ডিল” হিসেবে উপস্থাপন করা যায় না।
এটি ইতিহাস বিকৃতির নতুন রূপ, যার বিরুদ্ধে সতর্ক হওয়া সময়ের দাবি।

মুক্তিযুদ্ধকে কোনোভাবেই “ডিল” হিসেবে উপস্থাপন করা যায় না।
এটি ইতিহাস বিকৃতির নতুন রূপ, যার বিরুদ্ধে সতর্ক হওয়া সময়ের দাবি।… #এটাই_বাস্তবতা ……..