ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মুক্তিযোদ্ধাদের প্ল্যাটফর্ম ‘মঞ্চ ৭১’-এর অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা লতিফ সিদ্দিকী, অধ্যাপক হাফিজুর রহমান ও সাংবাদিক মুনজুরুল ইসলাম পান্নার ওপর হামলা চালিয়েছে বিএনপি-জামাত জোটের নেতৃত্বাধীন পরিকল্পিত মব। ঘটনাটির পেছনের রাজনৈতিক প্রভাব ও উদ্দেশ্য বিশ্লেষণ।
ঢাকার কেন্দ্রস্থল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ২৮ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধাদের নতুন প্ল্যাটফর্ম ‘মঞ্চ ৭১’-এর সেমিনারে যে অরাজকতা তৈরি হলো, তা কেবল একটি আকস্মিক ঘটনা নয়—বরং একটি পরিকল্পিত রাজনৈতিক মব আক্রমণ।
আয়োজিত সভায় অংশ নিয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী, অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন ও সাংবাদিক মুনজুরুল ইসলাম পান্না।
হঠাৎ করেই ‘জুলাইযোদ্ধা’ পরিচয়ে আল আমিন রাসেলের নেতৃত্বে বিএনপি-জামাত ঘরানার একটি দল প্রবেশ করে এবং উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের ঘেরাও করে।
তাদের সাথে ছিল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রশিবিরের নেতা শাকিব আহমদ, যিনি পূর্বেও ধানমন্ডি ৩২ ভাঙচুরের ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, আওয়ামীপন্থী আখ্যা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের এই নতুন প্ল্যাটফর্মকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে।
অধ্যাপক কার্জনের গায়ে হাত তোলা, সাংবাদিককে হেনস্থা করা এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের লাঞ্ছিত করার মধ্যে দিয়ে স্পষ্ট যে, লক্ষ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ১৯৭১-এর ঐতিহাসিক সত্যকে আঘাত করা।
শিবির নেতা শাকিব আহমদ ও তার সহযোগীদের উপস্থিতি প্রমাণ করে, এটি কেবল ছাত্ররাজনীতির সংঘর্ষ নয়, বরং একটি সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টা—১৯৭১ বনাম ২০২৪-এর মুক্তিকামী জনতার লড়াইকে মুখোমুখি দাঁড় করানো।
ঘটনার পরপরই ডিবি পুলিশ লতিফ সিদ্দিকীসহ ছয়জনকে নিজেদের হেফাজতে নেয়।
যদিও তাদের বক্তব্য ছিল—
“মূলত নিরাপত্তার স্বার্থে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে”
তবু প্রশ্ন থেকেই যায়, কেন হামলাকারীদের পরিবর্তে ভুক্তভোগীদেরকেই সরিয়ে নেওয়া হলো?
এই ঘটনা স্পষ্ট করে দেয় যে—
মুক্তিযোদ্ধাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রচেষ্টা জামাত-বিএনপি চক্রের জন্য অস্বস্তিকর।
ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য ‘জুলাইযোদ্ধা’ প্রজন্মকে ব্যবহার করা হচ্ছে।
মুক্তিযোদ্ধাদের বিভক্ত করে ৭১ বনাম ২৪-এর কৃত্রিম দ্বন্দ্ব দাঁড় করানো হচ্ছে।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এই হামলা প্রমাণ করে, মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্ন আজও বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংগ্রামের কেন্দ্রে।
মুক্তিযোদ্ধাদের নতুন প্ল্যাটফর্ম ‘মঞ্চ ৭১’-এর জন্মই ছিল ঐক্য ও সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য।
কিন্তু বিএনপি-জামাত জোটের এই সংঘবদ্ধ আক্রমণ আবারও দেখিয়ে দিল—তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করে নতুন প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
