দেশের শেয়ারবাজারে টানা তিন সপ্তাহ ধরে পতন অব্যাহত। গত সপ্তাহে বাজার মূলধন কমেছে আরও ১ হাজার কোটি টাকা। সূচক ও লেনদেনও নিম্নমুখী।
টানা তিন সপ্তাহ ধরে দেশের শেয়ারবাজারে নেতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, গত সপ্তাহে বাজার মূলধন কমেছে আরও ১ হাজার ১৮ কোটি টাকা। এর ফলে বাজার মূলধন নেমে দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ২৩ হাজার ৪৪৮ কোটি টাকায়, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় ০.১৪ শতাংশ কম।
প্রশ্ন জাগছে—এই ধারাবাহিক পতনের পেছনে আসল কারণ কী?
এটি কি বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা, নাকি দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির ভেতরে জমে থাকা অনিশ্চয়তার প্রতিফলন?
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গত সপ্তাহে কমেছে ৩৪.৮০ পয়েন্ট বা ০.৬৪ শতাংশ।
তার আগের দুই সপ্তাহে এই সূচক যথাক্রমে ৭৩.৮৫ এবং ৯০.৫০ পয়েন্ট কমেছিল।
ফলে তিন সপ্তাহে সূচকের পতন দাঁড়িয়েছে প্রায় ২০০ পয়েন্টে, যা স্বল্প সময়ে উল্লেখযোগ্য ধাক্কা।
অন্য সূচকগুলোও ভালো অবস্থায় নেই:
- ডিএসই-৩০ সূচক কমেছে ৪.১০ পয়েন্ট (০.১৯ শতাংশ)।
- ডিএসই শরিয়াহ সূচক কমেছে ৬.৭৩ পয়েন্ট (০.৫৭ শতাংশ)।
লেনদেনের গতি আরও বেশি শ্লথ হয়েছে, গত সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন দাঁড়ায় মাত্র ৫৮৩ কোটি টাকা, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় প্রায় ১৭ শতাংশ কম।
এই সংকোচন বাজারে নগদ অর্থ প্রবাহের ঘাটতি এবং বিনিয়োগকারীদের সতর্ক অবস্থানকে নির্দেশ করে।
লেনদেনের তালিকায় শীর্ষে ছিল সামিন এলায়েন্স পোর্ট, যেখানে প্রতিদিন গড়ে ২৪ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে।
এরপর যথাক্রমে খান ব্রদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ও ওরিয়ন ইনফিউশন শীর্ষ তিনে স্থান পেয়েছে।
তালিকায় আরও ছিল:
- ফারইস্ট নিটিং
- টেকনো ড্রাগস
- ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স
- ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক
- সোনালী পেপার
- এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ
- রবি
এগুলোতে লেনদেন তুলনামূলক বেশি হলেও বাজারের সামগ্রিক চিত্র নেতিবাচকই রয়ে গেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, বাজারের এ পতন শুধু সাময়িক কোনো কারসাজির ফল নয়।
বরং এর পেছনে রয়েছে বহুমাত্রিক কারণ—
বিনিয়োগকারীরা ব্যাংকিং খাতে বেশি আগ্রহী হচ্ছে।
শেয়ারবাজারে প্রণোদনা বা স্থিতিশীল নীতি না থাকায় আস্থা কমছে।
লভ্যাংশ ও মুনাফার তথ্য বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না।
সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি বাজারে অতিরিক্ত চাপ তৈরি করছে।
টানা তিন সপ্তাহ ধরে পতন স্পষ্টতই একটি সতর্ক সংকেত।
যদি এই ধারা চলতে থাকে, তবে বাজার থেকে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের আরও বড় অঙ্কের অর্থ বেরিয়ে যেতে পারে।
এর ফলে বাজারে লিকুইডিটি সংকট আরও প্রকট হবে।
একইসঙ্গে, ডিএসইর নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং সরকারের আর্থিক নীতিনির্ধারকদের এখন জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে হবে।
যেমন:
বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য স্বচ্ছ নীতি প্রণয়ন
বাজারে তরল অর্থ প্রবাহ নিশ্চিত করা
তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শাসনব্যবস্থা ও আর্থিক স্বচ্ছতা জোরদার করা
শেয়ারবাজার কোনো দেশের অর্থনীতির আয়না।
টানা পতন শুধু সংখ্যার খেলা নয়, বরং বিনিয়োগকারীদের মনস্তত্ত্ব, অর্থনৈতিক নীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রত্যাশার একটি প্রতিফলন।
বাংলাদেশ শেয়ারবাজারে সাম্প্রতিক এই পতন নীতিনির্ধারক ও অংশীজনদের জন্য সতর্কবার্তা।
এখন সময় এসেছে আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য যৌক্তিক, স্থিতিশীল ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলার।
