রাজধানীর প্রেসক্লাব এলাকায় স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষকদের জাতীয়করণের দাবিতে বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশের জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপে অন্তত ৪৩ জন শিক্ষক আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।
রাজধানীর প্রেসক্লাব এলাকায় বুধবার (২৯ অক্টোবর) দুপুর সোয়া দুইটার দিকে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবিতে বিক্ষোভে নামেন শিক্ষকরা। তারা প্রেসক্লাবের সামনে থেকে ভুখা মিছিল নিয়ে সচিবালয়ের দিকে রওনা দেন। কিছু দূর যেতেই পুলিশ বাধা দেয়। এরপর পুলিশ জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ঘটনায় অন্তত ৪৩ জন শিক্ষক আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, যাদের কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।
শাহবাগ থানার প্যাট্রোল ইনস্পেক্টর সরদার বুলবুল আহমেদ বলেন, “ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকরা জোর করে সচিবালয়ের দিকে যেতে চাইছিলেন।
তাদের বুঝিয়ে ফেরানোর চেষ্টা করা হলেও তারা তা মানেননি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতেই জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়।”
অন্যদিকে শিক্ষক নেতারা অভিযোগ করেছেন, তারা শান্তিপূর্ণভাবে দাবি জানাতে এসেছিলেন, কিন্তু পুলিশ অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করেছে। তাদের দাবি,
সরকার অবিলম্বে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসাগুলো জাতীয়করণ, বেতন কাঠামো ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নিক।
বিক্ষোভে উপস্থিত শিক্ষকরা জানান, বছরের পর বছর ধরে তারা অবহেলিত ও বঞ্চিত। প্রাথমিক শিক্ষকদের মতো সমান মর্যাদা ও সুবিধা চেয়েও পাচ্ছেন না।
“আমরা শিক্ষাদান করি, দেশের ভবিষ্যৎ তৈরি করি, অথচ আমাদের ন্যায্য প্রাপ্য চাইতে রাস্তায় নামতে হয়,”—বলেছেন এক শিক্ষক। বিশ্লেষকরা বলছেন,
এই ঘটনাটি শুধু প্রশাসনিক নয়, মানবাধিকার ও শিক্ষা ব্যবস্থার অন্তর্নিহিত সংকটের প্রতিফলন। শান্তিপূর্ণ দাবিকে দমন করা গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির জন্যও হুমকি।
এদিকে, পুলিশের বলপ্রয়োগে আহত শিক্ষকদের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন।
সরকারি সূত্র বলছে, বিষয়টি পর্যালোচনা করা হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা যেন আর না ঘটে সে বিষয়ে সতর্কতা নেওয়া হবে।
তবে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দাবিগুলো পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষকদের জাতীয়করণ নিয়ে দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা আবারও সংঘাতে রূপ নিয়েছে।
শিক্ষকদের দাবি বাস্তবায়নে সরকার দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে আন্দোলন আরও বিস্তৃত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
