 
                  ৫ আগস্ট ২০২৪ সালের পর থেকে বাংলাদেশের জেলখানায় অর্থ লুটপাটের সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, আত্মীয়দের মুক্তির জন্য লাখ লাখ টাকা আদায় করা হচ্ছে। জ্যোতির্ময় বড়ুয়া সংবাদ সম্মেলনে এই বিষয় তুলে ধরেন।
তারিখ:২৮ এপ্রিল ২০২৫: ঢাকা প্রতিনিধি:
বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলখানায় গড়ে উঠেছে ভয়ঙ্কর এক দুর্নীতির সিন্ডিকেট। ৫ আগস্ট ২০২৪ এর পর থেকেই জেল প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারী মিলে গোপনে এমন এক চক্র সৃষ্টি করেছে যারা আটক বন্দিদের ওপর চালাচ্ছে নির্যাতনমূলক অর্থনৈতিক শোষণ। এই সিন্ডিকেটের কার্যক্রম কার্যত অপহরণের মতোই—বন্দিদের পরিবারের কাছ থেকে মুক্তির জন্য বিশাল অঙ্কের অর্থ আদায় করা হচ্ছে।
ভুক্তভোগী ও তাদের স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গ্রেপ্তার হওয়ার পর অনেক বন্দিকে প্রথমে কোনো আলোক-হীন, বদ্ধ, ভয়ঙ্কর প্রকোষ্ঠে আটকানো হয়, যেখানে নেই কোনো জানালা, বাতাস, পানির সুবিধা বা ওয়াশরুম। সেখানে তাদের দিনের পর দিন আটকে রাখা হয়—শুধুমাত্র পরিবারের সদস্যদের থেকে বড় অঙ্কের টাকা আদায়ের উদ্দেশ্যে। ওই ঘরে আটকে রেখে বন্দিকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করা হয় যাতে সে নিজেই তার আত্মীয়-স্বজনকে টাকা নিয়ে আসার জন্য চাপ দেয়।
একাধিক ভুক্তভোগী অভিযোগ করেছেন, জেলখানার ভেতর থেকে ফোন করে বলা হয়—দুই লাখ, পাঁচ লাখ বা বিশ লাখ টাকা দিতে হবে, তবেই বন্দিকে ‘ওয়ার্ডে’ (সাধারণ কয়েদিদের সঙ্গে) স্থানান্তর করা হবে। অন্যথায় তাকে সেই “অন্ধকার প্রকোষ্ঠে” আটকে রাখা হবে দিনের পর দিন। অনেকে বর্ণনা দিয়েছেন, সেই প্রকোষ্ঠের মধ্যে অদ্ভুত বিকট শব্দ হয়, যেন বন্দি মনে করে এই মুহূর্তেই তার মৃত্যু ঘটতে পারে—যা পরিকল্পিতভাবে মানসিক ভীতির জন্য ব্যবহৃত হয়।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, এই সিন্ডিকেটের সাথে জেলখানার জেলার, ডেপুটি জেলার এবং নিচের স্তরের কারারক্ষীরাও সরাসরি জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, যারা টাকা দিতে অক্ষম, তাদের জামিন হওয়ার পরও দিনের পর দিন আটকে রাখা হয়। জামিনের আদেশ পাওয়া সত্ত্বেও তাদের মুক্তি দেওয়া হয় না, বরং নানান গোয়েন্দা সংস্থার ‘ক্লিয়ারেন্স’-এর অজুহাতে মুক্তির সময় বিলম্ব করা হয়, এবং সেই সময়ও মুক্তির জন্য অর্থ আদায়ের চেষ্টা চলে।
বিশিষ্ট মানবাধিকার আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “জেল কোডে কোথাও বলা নেই যে আদালতের জামিন পাওয়া বন্দিকে আটকে রাখার এখতিয়ার জেল কর্তৃপক্ষের আছে।” তিনি আরও জানান, কিছু প্রসূতি নারী আসামিকেও জামিনের পর মুক্তি দেওয়া হয়নি, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভয়াবহ উদাহরণ।
বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলখানায় এমন ভয়াবহ ঘটনা ঘটলেও, প্রশাসনিকভাবে এখনো দৃশ্যমান কোনো বড় অভিযান শুরু হয়নি। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতি ভুক্তভোগীরা দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সিন্ডিকেট ভেঙে না দেওয়া হলে বাংলাদেশের বিচারিক ও কারা ব্যবস্থার ওপর জনগণের আস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বাংলাদেশের জেলখানাগুলোর অভ্যন্তরে দুর্নীতির এই চিত্র শুধু মানবাধিকারেরই লঙ্ঘন নয়, রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের ব্যর্থতারও নগ্ন উদাহরণ। সরকারের উচিত অবিলম্বে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে সংশ্লিষ্ট জেলকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।

 
                         
         
         
        