 
                  বরিশালে ইসলামী আন্দোলনের সংবাদ সম্মেলন থেকে নারী সাংবাদিককে বের করে দেওয়ার ঘটনায় ধর্মীয় ব্যাখ্যা ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের দ্বন্দ্ব নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ঘটনার বিশ্লেষণ ও প্রতিক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন।
📅 প্রকাশিত তারিখ: ২ মে ২০২৫
বরিশাল প্রেস ক্লাবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সংবাদ সম্মেলন ঘিরে এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। নারী সাংবাদিক মনিকা চৌধুরিকে সংবাদ সম্মেলনের হলরুম থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনায় ধর্মীয় বিধান বনাম সাংবিধানিক অধিকার নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
📌 কী হয়েছিল?
২০২৫ সালের মে মাসের প্রথম শনিবার বরিশাল প্রেস ক্লাবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেন। তার দাবি—বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে অনিয়ম হয়েছে, এবং তিনি প্রকৃত মেয়র। সে দাবিতে তিনি আদালতে আবেদন করেছেন, যার শুনানি আগামী ৫ মে।কিন্তু সংবাদ সম্মেলনের মাঝপথে যুগান্তরের নারী সাংবাদিক মনিকা চৌধুরিকে বলা হয় অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করতে। কারণ, দলটির নেতাদের মতে, “নারী সাংবাদিক সেখানে থাকতে পারবেন না।”
🎙️ সাংবাদিকের ভাষ্য
মনিকা চৌধুরি বলেন, “আমি সংবাদ সম্মেলনের ছবি তুলছিলাম, তখন তারা বলেন আমাকে বের হয়ে যেতে হবে। বললাম আমি সাংবাদিক হিসেবে এসেছি, কিন্তু তারা বলে ‘আপনি নারী, আপনাকে থাকতে দেওয়া যাবে না।’”এটা শুধু পেশাগত বাধা নয়—এটা সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘনের এক নগ্ন উদাহরণ বলেই মনে করছেন অনেকেই।
🕌 ইসলামী আন্দোলনের অবস্থান
দলের নায়েবে আমির ফয়জুল করীম বলেন,
“আমি একজন মুসলমান। আমার ধর্ম অনুযায়ী আমায় সবকিছু পালনের অধিকার আছে। তবে রাষ্ট্রীয় নিয়মের তোয়াক্কা করতেই হবে।”
তিনি বিষয়টিকে পুরোপুরি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করলেও সমালোচকরা বলছেন—একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে প্রকাশ্য সংবাদ সম্মেলনে নারী সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার রোধ করা সংবিধানবিরোধী।
⚖️ ধর্ম বনাম রাষ্ট্র: দ্বৈত মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ?
ঘটনার সারমর্ম বিশ্লেষণে যা স্পষ্ট হয় তা হলো—
- একদিকে ফয়জুল করীম রাষ্ট্রীয় মেয়র পদের দাবিতে নির্বাচন কমিশন ও আদালতের আশ্রয় নিচ্ছেন;
- অপরদিকে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর অংশ ‘গণমাধ্যম’-এর নারীকর্মীকে ধর্মের নামে বঞ্চিত করছেন।
এই দ্বৈত আচরণই নাগরিক সমাজ ও মিডিয়া মহলে নতুন করে প্রশ্ন তোলে—এই কি সেই ‘আন্তর্জাতিক মানের ইসলামি রাজনীতি’ যার কথা বলা হয়?
📣 প্রতিক্রিয়া ও ন্যায়বিচারের দাবি
সাংবাদিক ইউনিয়ন ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ইতোমধ্যেই এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে। নারীর কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা ও সম্মান রক্ষার প্রশ্নে এ ধরনের আচরণ সাংবিধানিক অধিকার ও পেশাগত নীতিমালার সম্পূর্ণ লঙ্ঘন।
মনিকা চৌধুরী বিচার দাবি করেছেন এবং জাতীয় সাংবাদিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকেও বিষয়টি তদন্তের আহ্বান জানানো হয়েছে।
বরিশালের এই ঘটনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মানসিকতা ও ধর্মীয় ব্যাখ্যার বাস্তব প্রয়োগ নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তোলে। এটা শুধু একটি নারী সাংবাদিকের পেশাগত প্রতিবন্ধকতা নয়—এটা নাগরিক অধিকার ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রবোধের এক অগ্নিপরীক্ষা।
 
                         
         
         
        