৮ মে ২০২৫ | মতামত ও বিশ্লেষণ | প্রতিবেদক: স্বাধীন সাহা
বাংলাদেশের মাদারীপুর জেলার আলম মীরের কান্দি গ্রামে একটি শতবর্ষী বটবৃক্ষ কেটে ফেলা হয়েছে, শুধু এই কারণে যে—সেখানে পূজা হতো, মানত দেওয়া হতো, বাউল গান হতো, বৈশাখী মেলা বসত। ধর্মীয় উগ্রবাদের দোহাই দিয়ে এই বৃক্ষের কাণ্ডারী হয়ে দাঁড়িয়েছে একদল ইসলামী জেহাদি চেতনায় দীক্ষিত মৌলবাদী। করাত হাতে তারা এসেছে গাছ কাটতে, প্রকৃতির শ্বাসরোধ করতে, এবং জাতিকে একটি অন্ধকারে ঠেলে দিতে।
এই গাছ কাটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি একটি সুপরিকল্পিত সাংস্কৃতিক নির্মূল নীতির অংশ, যার ছত্রছায়ায় আছে রাষ্ট্র এবং ক্ষমতার কেন্দ্র। একদিকে ‘শিরক’, ‘বিদআত’, ‘হারাম’ বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে বাঙালি সংস্কৃতির প্রতীকগুলোকে, অন্যদিকে প্রশাসন ঘুমিয়ে আছে, অথবা মৌন সমর্থনে এই মৌলবাদকে প্রশ্রয় দিচ্ছে।
🌳 বটবৃক্ষের মৃত্যুর প্রতীকী মানে
একটি শতবর্ষী বটগাছ কেটে দেওয়া মানে কেবল একটি গাছের মৃত্যু নয়—এটি একটি ইকোসিস্টেমের মৃত্যু। এই গাছ ছিল ছায়ার আশ্রয়, ছিল পাখি, বাদুড়, কীটপতঙ্গ এবং নদীর ধারে মানুষের নির্ভরতার প্রতীক। গাছ কেটে দেওয়া মানে এই আশ্রয় কেড়ে নেওয়া, এই প্রাণ-জীবন ছিন্ন করা।
⚔️ সংস্কৃতি নির্মূল ও ধর্মীয় মৌলবাদের সমন্বিত আগ্রাসন
এই ঘটনা প্রমাণ করে, বাংলাদেশে মৌলবাদ ও সংস্কৃতি ধ্বংসের একটি দীর্ঘ পরিকল্পনা চলছে। ধর্মের নামে:
- বটবৃক্ষ কাটা হচ্ছে,
- পূজা বন্ধ করা হচ্ছে,
- বৈশাখী মেলা ধ্বংস করা হচ্ছে,
- বাউল গান নিষিদ্ধ করা হচ্ছে।
এ যেন এক তালেবানি রাষ্ট্র কাঠামোর ছায়া, যেখানে বিচার হয় ফতোয়ায়, শাস্তি হয় সন্দেহে, এবং রাষ্ট্রীয় মদতে এই ধর্মান্ধতা ছড়িয়ে পড়ছে।
⚠️ রাষ্ট্রীয় মদত ও নীরব সহানুভূতি
সবচেয়ে ভয়াবহ দিকটি হলো—এইসব কর্মকাণ্ড হচ্ছে রাষ্ট্রীয় নীরবতা বা সক্রিয় উৎসাহে। ইউনুস সরকারের সময় গঠিত মৌলবাদী কাঠামো এখন এমন এক অবস্থায় পৌঁছেছে, যেখানে তারা নিজেরাই বিচারক, আইন ও শাস্তিদাতা। তদন্ত নেই, দায় নেই, শুধু ধর্মের নামে চালানো এক ভয়ংকর দখলযুদ্ধ।
🔚 উপসংহার: একটি গাছের কাটা, একটি দেশের আত্মহত্যা
এই গাছের কাটা আসলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও পরিবেশগত আত্মহত্যার প্রতীক। এটি দেখিয়ে দেয়—এই রাষ্ট্রে এখন:
- প্রকৃতি নিরাপদ নয়,
- সংখ্যালঘুর বিশ্বাস সুরক্ষিত নয়,
- সংস্কৃতির চর্চা অপরাধ,
- মতপ্রকাশ শাস্তিযোগ্য।
মাদারীপুরের এই ঘটনা একটি জাতির মূল্যবোধ, বহুত্ববাদ ও সহনশীলতা হারিয়ে ফেলার গভীর সংকেত বহন করে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে—আমরা কী এই আত্মহননের দিকে চুপচাপ এগিয়ে যাব, নাকি প্রতিরোধ গড়ব?
